পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মহাশক্তি, চৈতন্যরূপিণী জ্যোতির্ময়ী আজ আমাদের হৃদয়-পাদপীঠে তাঁর অলক্তরাগরঞ্জিত পা দু’খানি রেখে বলছেন— “মাভৈঃ— জাগৃহি।”

 জাগো মায়ের সন্তান, দূর করো তোমাদের বৃথা তর্ক, ধার করা কথার মালা, ধূলায় ছুড়ে ফেলে দাও তোমাদের বিলাস ব্যসন, মুছে ফেলো তোমাদের ললাট হতে যুগযুগান্তরের সঞ্চিত ঐ দাসত্ব-কালিমার রেখা।

 নবীন সৃষ্টির গুরু দায়িত্ব মাথায় করে আমরা আজ কর্মক্ষেত্রে অবতীর্ণ হব। বিধাতা আমাদের তরুণ প্রাণে সৃষ্টিশক্তির প্রেরণা দিয়েছেন। আমাদের জীবনের সমস্ত উন্মাদনা সকল ভাবুকতার মধ্যে আমরা যেন আজ এই কথা মর্মে মর্মে অনুভব করতে পারি যে, আমরা ছোটো নই আমরা বড়ো, নইলে সমস্ত ম্রিয়মাণ ধ্বংসোন্মুখ উপাদানের উপর এই নব সৃষ্টির দুরূহ ভার বিধাতা আমাদের উপর দিলেন কেন?

 মনুষ্যজীবনেব পরম সার্থকতা সৃষ্টির আনন্দে। আমরা আজ সেই সৃষ্টির আনন্দ উপলব্ধি করবার জন্য আমাদের সমস্ত কর্মশক্তিকে নিয়ন্ত্রিত করব।

 পরোপিকারের হীন আত্মপ্রসাদ লাভের জন্য নয়, পতিত জাতির উদ্ধারের অহংকারের জন্য নয়, কর্ম-কর্তৃত্বের আত্মম্ভরী জ্ঞান হইতে নয়— আমরা আমাদের মিলিত শক্তির দ্বারা, সমবেত চেষ্টার দ্বারা যে সেবাব্রত উদ্‌যাপন করব, তা শুধু নিজেদের মনুষ্যত্বের বিকাশ সাধনের জন্য, আত্মবিস্মৃত পুরুষ-সিংহের জাগরণের জন্য মথিত নর-নারায়ণের উদ্বোধনের জন্য। অনাদি কাল হতে ভারতবর্ষের যে মহান্ আদর্শ পরসেবাব্রতেই প্রারম্ভ হয়েছে, তা এই সেবাব্রতেই উদ্‌যাপিত হয়ে আমাদের সিদ্ধির পথে অগ্রসর করে দেবে।

 আমি জানি এই দুর্দিনে আমাদের এই সাধনা কঠোর, অতি ভয়ংকর—

“পিছনে উঠিছে ঝড়, সম্মুখেতে অন্ধকার বন
নামমাত্র পথরেখা, তাও আজ হয়েছে নির্জন,
চরণ চলে না আর, দেহলতা কাঁপে থর থর,
কণ্টকে সংকট পথ, চোখ দুটি জলে ভর ভর।
তবু যে গো যেতে হবে, থেমে থাকা মরণের দায়,
কেন মিছে থেমে যাও, হে পথিক, ঘরের মায়ায়?
সর্বহারা মহাপ্রাণ, তাহারে কে রাখে বন্ধ করে,
আলোর ইশারা আসে, প্রতিদিন তারই অন্ধ ঘরে।