পাতা:তরুণের আহ্বান - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



মৃতদেহ আগুলিয়া, সেই আছে নিশিদিনমান
কে জানে আসিবে কবে, এক বিন্দু অমৃতের দান।”

 এই অমৃতের দানের আশায় আমরা থাকিব, নিশ্চেষ্ট হয়ে নয়, অদৃষ্টবাদীর মতো নয়, দুর্বল পরমুখাপেক্ষীর মতো নয়— আমরা আমাদের স্বাধীন, আত্মস্বতন্ত্র কর্মঠ শত শত অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সদা জাগ্ৰত থাকব। সমগ্র বাংলায় এইরূপ অসংখ্যা কর্মকেন্দ্ৰ স্থাপন করতে হবে। যেখানে কোনো কর্মকেন্দ্ৰ নাই, সেখানে উৎসাহী কর্মী দলকে সংঘবদ্ধ করে নূতন কর্মপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। যে-সকল স্থানে কর্মকেন্দ্ৰ পূর্ব হতে জাগ্রত অথবা মৃতপ্রায় হয়ে রয়েছে সে-সবগুলিকে বর্তমানের কর্মোপযোগী করে, নূতন প্রেরণা দিয়ে, নূতন আদর্শে সঞ্জীবিত করে, একটা বিরাট কর্মকেন্দ্রের অঙ্গীভাূত করতে হবে। আমাদের আদর্শ যদি সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়, তা হলে নানাভাবে বিস্তৃত বা বিক্ষিপ্ত সকল কর্মকেন্দ্রের মধ্যে একই দুর্লঙ্ঘ্য অনিবার্য শক্তি আমাদের সমস্ত কর্মসাধনাকে সেই একই পরম লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যাবে। এইরূপে আমরা ‘এক’ হইতে ‘বহুতে’ এবং ‘বহু’ হইতে ‘একের’ মধ্যে একটা সহজ, সরল স্বাভাবিক সংযোগের সৃষ্টি করে, আমাদের সাধনার ক্ষেত্ৰকে আন্তরিক ঔদার্যের দ্বারা সর্বজনগ্রাহ্য এবং সকলের পক্ষে সুলভ করে আমাদের কর্ম বাহুল্যের মধ্যে সম্প্রীতি ও ঐক্য বিধান করতে পারব।

 সেখানে রাজনীতিক মতদ্বৈবধের কোনো স্থান থাকবে না, সমাজপদ্ধতির কোনো বিশিষ্ট আচার-অনুষ্ঠানকে গোঁড়ামির দ্বারা বড়ো করে দেখা হবে না, বিভিন্ন ধর্মের পার্থক্য কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না- সেখানে সমস্ত দেশবাসী জাতিধৰ্ম নির্বিশেষে একই আদর্শ অনুসরণ করে, একই লক্ষ্যে, একই পথে আপনি আপন মনুষ্যত্বকে পাথেয় রূপে গ্ৰহণ করে আমরণ চলতে থাকবে।

 জনশিক্ষার বহুল প্রচার দ্বারা দেশের আত্মমর্যাদাবৃদ্ধি জাগিয়ে তুলতে হবে। নষ্ট শিল্পের পুনরুদ্ধার করে তাকে গড়ে তুলতে হবে। ধ্বংসোন্মুখ পল্লীসমূহের সংস্কার দ্বারা দেশের লুপ্ত সৌন্দর্যকে ফিরিয়ে আনতে হবে। এই-সব বিভিন্ন কর্মের ভার আমাদের কর্মকেন্দ্ৰগুলিকেই গ্রহণ করতে হবে। আমাদের কর্মকেন্দ্র ক্ষুদ্রই হউক আর বিরাটই হউক, যেখানে সহকর্মীর