পাতা:তরুণের স্বপ্ন - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২০
তরুণের স্বপ্ন

প্রচার করিয়াছিলেন সে সব বিষয়ে তিনি তাঁহার কারাবাসের সময়ে গভীর ভাবে চিন্তা করিয়াছিলেন। সময়ে সময়ে সে সকল বিষয়ে আমাদের সহিত আলোচনা হইত। কাউন্সিল প্রবেশের কথা তিনি সেখানেই স্থির করিয়াছিলেন এবং বহু তর্কের পর আমরা তাঁহার পক্ষ সমর্থন করি। কাউন্সিল প্রবেশের প্রস্তাব লইয়া তখন জেলখানার মধ্যে খুব দলাদলিও হইয়াছিল। দৈনিক ইংরাজী পত্রিকা প্রকাশের সঙ্কল্পও আমরা সকলে জেলখানায় করি। তবে দুঃখের বিষয়, তাঁহার কতকগুলি মহৎ সঙ্কল্প আজও কাজে পরিণত হয় নাই।

জেলখানার আর একটি ঘটনার উল্লেখ আমি এস্থলে না করিয়া পারি না—কয়েদীর প্রতি তাঁহার ভালবাসা। আমরা যে সময়ে প্রেসিডেন্সী জেল হইতে আলিপুর জেলে স্থানান্তরিত হই, সে সময়ে আলিপুর জেলে আমাদের ওয়ার্ডে (ward) মথুর নামে একজন কয়েদী কাজ করিত। জেলের ভাষায় যাহাকে বলে “পুরাণা চোর” মথুর তাহাই ছিল। তাহাকে বোধ হয় চোর বলিলে অন্যায় হয়, সে ছিল ডাকাত। আট দশ বার সে জেলখানায় ঘুরিয়াছে। কিন্তু অন্যান্য ডাকাতদের ন্যায়ই তাহার অন্তঃকরণ ছিল খুব সরল। কিছুদিন কাজকর্ম্ম করিবার পর দেশবন্ধুর উপর মথুরের ভক্তি ও ভালবাসা জন্মিল—সে তাঁহাকে “বাবা” বলিয়া ডাকিতে লাগিল। মথুরের প্রতিও দেশবন্ধুর সমবেদনা ও ভালবাসা জাগরিত হইল। ক্রমশঃ সে আমাদের সকলের প্রতিও আকৃষ্ট হইয়া পড়িল। রাত্রে অথবা দিনের বেলায় তাঁহার পা টিপিবার সময়ে মথুর তাহার জীবনের সকল ইতিহাস তাঁহাকে বলিত। মুক্তির সময় নিকটবর্ত্তী হইলে দেশবন্ধু তাহাকে বলিলেন, যে তাহার খালাসের পর তিনি তাহাকে নিজের বাড়ীতে রাখিবেন, যেন সে অসৎ সঙ্গে পড়িয়া পুনরায় ডাকাতিতে