জেলখানার আলোচনার মধ্যে তাঁহার নির্ব্বিচার বদান্যতার বিরুদ্ধে কোনও কথা বলিলে তিনি বলিতেন, “দেখ তোমরা মনে করিবে আমি নিতান্ত বোকা; লোকে আমাকে ঠকিয়ে টাকা নিয়ে যায়। কিন্তু আমি সব বুঝতে পারি, আমার কাজ দিয়ে যাওয়া, তাই আমি দিয়ে যাই। বিচার করবার ভার যার উপর তিনি বিচার করবেন।”
যে তন্ত্রের উপদেশে বাঙ্গালী শক্তিপূজা শিখিয়াছে সেই তন্ত্রের প্রভাবে দেশবন্ধু অসাধারণ তেজস্বী বীর হইয়াছিলেন। দেশবন্ধু অবশ্য কোনও দিন তান্ত্রিক সাধনা করেন নাই, অন্ততঃ করিয়াছিলেন বলিয়া আমি জানি না। কিন্তু কুলাচার, বীরাচার, চক্রানুষ্ঠান প্রভৃতি সাধনা না করিলে যে শক্তিমান হওয়া যায় না—এ-কথা আমি স্বীকার করি না। তন্ত্রের সার কথা শক্তিপূজা। জগতের মূল সত্য আদ্যাশক্তি, যাহা হইতে সৃষ্টি, স্থিতি, প্রলয় অথবা ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর। সেই আদ্যাশক্তিকে সাধক মাতৃরূপে আরাধনা ও পূজা করিয়া থাকে। বাঙ্গালীর উপর তন্ত্রশাস্ত্রের প্রভাব খুব বেশী বলিয়া বাঙ্গালী জাতিহিসাবে মায়ের অনুরক্ত এবং ভগবানকে মাতৃরূপে আরাধনা করিতে ভালবাস। পৃথিবীর অন্যান্য জাতি ও ধর্ম্মাবলম্বীরা (যথা ইহুদি, আরব, খৃষ্টিয়ান) ভগবানকে পিতৃরূপে আরাধনা করিয়া থাকে। ভগিনী নিবেদিতার মতে যে সমাজে নারী অপেক্ষা পুরুষের প্রাধান্য, সেখানে ভগবানকে লোকে পিতৃরূপে কল্পনা করিতে শিখে। অপর দিকে যে সমাজে পুরুষ অপেক্ষা নারীর প্রাধান্য, সেখানে লোক ভগবানকে মাতৃরূপে কল্পনা করিতে শিখে। সে যাহা হউক, বাঙ্গালী যে ভগবানকে—শুধু ভগবানকে কেন, বাঙ্গলা দেশকে এবং ভারতবর্ষকে মাতৃরূপে কল্পনা করিতে ভালবাসে—এ কথা সর্ব্বজনবিদিত। দেশকে আমরা মাতৃভূমি কল্পনা করিয়া থাকি, কিন্তু মাতৃভূমির ইংরাজী