পাতা:তরুণের স্বপ্ন - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩০
তরুণের স্বপ্ন

যাহা সঙ্কল্প করিয়াছেন তখন তাহা সাধন করিয়াছেন। “মন্ত্রং বা সাধয়েয়ম্‌ শরীরং বা পাতয়েয়ম্‌” এই বাণী তাঁহার হৃদয়ের মধ্যে গাঁথা ছিল। তিনি দুর্ব্বার বিক্রমে যখন যে পথে চলিতেন কেহ তাঁহাকে রোধ করিতে পারিত না। সমুদ্রের তরঙ্গায়িত জলরাশির ন্যায় সকল বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করিয়া আপনার বেগে আপন আদর্শের পানে ছুটিতেন। প্রিয়জনের আর্ত্তনাদ অথবা অনুচরবর্গের সাবধান বাণীও তাঁহাকে ফিরাইতে পারিত না। এই দিব্যশক্তি দেশবন্ধু কোথা হইতে পাইলেন? সে শক্তি কি সাধনার দ্বারা লভ্য?

আমি পূর্ব্বেই বলিয়াছি যে, দেশবন্ধু শক্তির সাধক হইলেও তিনি তন্ত্রমতে শক্তির সাধনা করেন নাই। তাঁহার প্রাণ ছিল বড়; আকাঙ্ক্ষা ছিল বড়। “যো বৈ ভূমা তৎসুখং নাল্পে সুখমস্তি"—এই কথা যেন তাঁহার অন্তরের বাণী ছিল। তিনি যখন যাহা চাহিতেন—সমস্ত প্রাণ মন বুদ্ধি দিয়া চাহিতেন। তাহা পাইবার জন্য একেবারে পাগল হইয়া যাইতেন। পর্ব্বতপ্রমাণ অন্তরায়ও তাঁহাকে ভীত বা পশ্চাৎপদ করিতে পারিত না। নেপোলিয়ান বোনাপার্ট যেরূপ এক সময়ে তাঁহার সম্মুখে আল্পস্‌ (Alps) পাহাড় দেখিয়া বলিয়াছিলেন—"There shall be no Alps"—আমার সম্মুখে আল্পস্‌ পাহাড় দাঁড়াইতে পারিবে না,—তিনিও সকল বাধা বিঘ্নকে তুচ্ছ জ্ঞান করিতেন। কি সম্বল লইয়া তিনি “ফরওয়ার্ড” পত্রিকা প্রকাশে ও কাউন্সিল-জয়ের চেষ্টায় হস্তক্ষেপ করিয়াছিলেন, এ সংবাদ যিনি জানেন তিনিই এই উক্তি সমর্থন করিবেন। আমরা কোনও প্রকার অসুবিধা বা বাধার কথা তুলিলে তিনি ধমক দিয়া বলিতেন—তোমরা একেবারে নির্ভরসা (তোমরা pessimist)। আমারও কাজ ছিল যেখানে কোন বিপদ বা অসুবিধার আশঙ্কা—সেই কথাটি