পাতা:তরুণের স্বপ্ন - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/২১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১২
তরুণের স্বপ্ন

প্রকৃত উন্মেষ হবে না। শুধু তাই নয়—বিজ্ঞান, শিল্প, কলা, সাহিত্য, ব্যবসায়, বাণিজ্য—এ সব ক্ষেত্রেও আমাদের জাতি জগৎকে কিছু দেবে ও কিছু শেখাবে। তাই ভারতের মনীষিগণ কত তমোময় যুগের মধ্যেও নির্নিমেষ নয়নে ভারতের জ্ঞানপ্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছেন। তাঁদের সন্ততি আমরা, আমাদের জাতীয় উদ্দেশ্য সফল না ক’রে কি মরতে পারি?

 মনুষ্যদেহ পঞ্চভূতে মিশলেও জীবাত্মা কখনও মরে না। তদ্রূপ মৃত্যুমুখে পতিত হ’লেও জাতির শিক্ষা, দীক্ষা ও সভ্যতার ধারাই তার আত্মা; জাতির সৃষ্টিশক্তি যখন বিলুপ্ত হয় তখন বুঝতে হবে যে জাতি মরতে বসেছে। আহার, নিদ্রা ও সন্তানোৎপাদন তখন তার কার্য্যতালিকা হ’য়ে দাঁড়ায় এবং গতানুগতিক পন্থা অনুসরণ করাই তার একমাত্র নীতি বলে পরিগণিত হয়। এ অবস্থায় পড়েও কোনও কোনও জাতি আবার বেঁচে ওঠে, যদি তার অস্তিত্বের সার্থকতা থাকে। অন্ধকারময় যুগ যখন জাতিকে এসে গ্রাস করে, তখন সে কোনও প্রকারে নিজের শিক্ষা, দীক্ষা ও সভ্যতার ধারা বাঁচিয়ে রাখে, অন্য জাতির সঙ্গে মিশে ভূত হয়ে যায় না। তারপর অদৃষ্ট বা ভগবানের ইঙ্গিতে আবার নব জাগরণ দেখা যায়। অন্ধকার ধীরে ধীরে অপসারিত হয়; প্রসুপ্ত জাতি আবার চোখ খোলে; তার সৃষ্টি-শক্তি ফিরে আসে। সহস্রদল পদ্মের মত জাতির প্রাণধর্ম্ম আবার ফুটে ওঠে এবং নব নব রূপে, নব নব ভাবে ও নব নব দিকে আত্মপ্রকাশ লাভ করে। এরূপ অনেক মৃত্যু ও জাগরণের ভিতর দিয়ে ভারতীয় জাতি চলে এসেছে, কারণ ভারতের একটা mission আছে,—ভারতীয় সভ্যতার একটা উদ্দেশ্য আছে যাহা আজও সফল হয় নাই।