পাতা:তরুণের স্বপ্ন - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পত্র
৪১

শুধু কাজের দ্বারা মানুষের আত্মবিকাশ সম্ভবপর নয়। বাহ্য কাজের সঙ্গে সঙ্গে লেখা-পড়া ও ধ্যান-ধারণার প্রয়োজন। কাজের মধ্য দিয়া যেমন বাহিরের উচ্ছৃঙ্খলতা নষ্ট হইয়া যায় এবং মানুষ সংযত হয়, লেখা-পড়া ও ধ্যান-ধারণার দ্বারা যেরূপ inernal discipline; অর্থাৎ ভিতরের সংযম প্রতিষ্ঠিত হয়। ভিতরের সংযম না হইলে বাহিরের সংযম স্থায়ী হয় না। আর একটি কথা, নিয়মিত ব্যায়াম করিলে শরীরের যেরূপ উন্নতি হয়—তেমনি নিয়মিত সাধনা করিলেও সদ্বৃত্তির অনুশীলন ও রিপুর ধ্বংস হইয়া থাকে। সাধনার উদ্দেশ্য দুইটি:—(১) রিপুর ধ্বংস, প্রধানতঃ কাম, ভয় ও স্বার্থপরতা জয় করা, (২) ভালবাসা, ভক্তি, ত্যাগ, বুদ্ধি, প্রভৃতি গুণের বিকাশ সাধন করা।

কামজয়ের প্রধান উপায় সকল স্ত্রীলোকের মধ্যে মাতৃরূপ দেখা ও মাতৃভাব আরোপ করা এবং স্ত্রী-মূর্ত্তিতে (যেমন দুর্গা কালী) ভগবানের চিন্তা করা। স্ত্রী-মূর্ত্তিতে ভগবানের বা গুরুর চিন্তা করিলে মানুষ ক্রমশঃ সকল স্ত্রীলোকের মধ্যে ভগলানকে দেখিতে শিখে। সে অবস্থায় পৌঁছিলে মানুষ নিস্কাম হইয়া যায়। এই জন্য মহাশক্তিকে রূপ দিতে গিয়া আমাদের পূর্ব্ব-পুরুষেরা স্ত্রী-মূর্ত্তি কল্পনা করিয়াছিলেন। ব্যবহারিক জীবনে সকল স্ত্রীলোককে “মা” বলিয়া ভাবিতে ভাবিতে মন ক্রমশঃ পবিত্র ও শুদ্ধ হইয়া যায়।

ভক্তি ও প্রেমের দ্বারা মানুষ নিঃস্বার্থ হইয়া পড়ে। মানুষের মনে যখনই কোন ব্যক্তি বা আদর্শের প্রতি ভালবাসা ও ভক্তি বাড়ে তখন ঠিক সেই অনুপাতে স্বার্থপরতাও কমিয়া যায়। মানুষ চেষ্টার দ্বারা ভক্তি ও ভালবাসা বাড়াইতে পারে এবং তার ফলে স্বার্থপরতাও কমাইতে পারে। ভাল বাসিতে বাসিতে মনটা ক্রমশঃ সকল সঙ্কীর্ণনতা ছাড়াইয়া