পাতা:তরুণের স্বপ্ন - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৮
তরুণের স্বপ্ন

না শিখে ছাত্র যদি কেবলি মুখস্থ ক’রে লেখা-পড়া শিখিতে আরম্ভ করে, তবে সে লেখা-পড়ার মধ্যে রস পায় না, লেখা-পড়াকে ভয় করতে শেখে এবং তার বুদ্ধি বিকশিত হয় না। শিশুর চোখ, কান, হাত, জিহ্বা, নাক যদি উপভোগের এবং জানবার বস্তু পায়, তবে এই সব ইন্দ্রিয় সজাগ হয়ে ওঠে, এর ফলে মনেও বুদ্ধি জাগরিত হয় এবং সকল রকম জ্ঞান সংগ্রহের ফলে লেখা-পড়ার সে রস পায়। Manual training না হ'লে শিক্ষার গোড়ায় গলদ রয়ে যায়। নিজের হাতে কোনও জিনিষ প্রস্তুত করলে যেরূপ আনন্দ পাওয়া যায়, সেরূপ আনন্দ পৃথিবীতে খুব অল্পই পাওয়া যায়। সৃষ্টির মধ্যে গভীর আনন্দ নিহিত রয়েছে। সেই joy of creation শিশুরা অল্প বয়সেই উপভোগ করে যখন তারা নিজের হাতে কোনও বস্তু তৈয়ারী করে। বাগানে বীজ পুঁতে গাছের সৃষ্টির দ্বারাই হোক, অথবা নিজের হাতে পুতুল তৈয়ারী করেই হোক, যে-কোনও বস্তু নূতন করে সৃষ্টি করতে পারলে শিশুরা গভীর আনন্দ উপভোগ করে। যে সব উপায়ে ছাত্রেরা এই আনন্দ অল্প বয়সেই উপভোগ করতে পারবে তার ব্যবস্থা করা চাই। এর দ্বারা তাদের originality বা ব্যক্তিত্বের বিকাশের সুবিধা হবে এবং লেখা-পড়াকে ভয় না করে তারা উপভোগ করতে শিখবে। বিলাতে অধিকাংশ প্রাথমিক স্কুলে ছাত্রেরা বাগানের কাজ শেখে, ব্যায়াম-চর্চ্চা করে, drill করে, পড়ার মাঝখানে খেলাধূলা করে, গান বাজনা শেখে, route march ক'রে পথে পথে সঙ্ঘবদ্ধভাবে ঘুরে বেড়ায়, clay-modelling (মাটি দিয়ে পুতুল প্রভৃতি তৈয়ারী করা) শেখে, গল্পচ্ছলে নানা বিষয় এবং নানা দেশের কথা শেখে। গল্পচ্ছলে শেখান সব চেয়ে বেশী দরকার। ছাত্রেরা যেন না বুঝতে পারে যে তারা লেখা-পড়া শিখছে, তারা যেন অনুভব করে যে, তারা গল্প শুনছে