পাতা:তরুণের স্বপ্ন - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৪
তরুণের স্বপ্ন

একটা idealism আছে। তারা তাকে পূজার সামগ্রী মনে ক'রে শ্রদ্ধা করে ও ভালবাসে; নানাপ্রকার দুঃখ যন্ত্রণার সঙ্গে যুদ্ধ করবার সময় সেই ভালবাসার উৎস হতেই তারা সাহস ও ভরসা পায়। এখানে আমার সঙ্গে যারা কারাযন্ত্রণা ভোগ করছে, তাদের মধ্যে এমন অনেক আছে যারা ভাবুক বা দার্শনিক নয়, তবুও তারা শান্তভাবে যন্ত্রণা ভোগ করে এবং বীরের মত সহ্য করে। Technical অর্থে তারা দার্শনিক না হতে পারে, কিন্তু তাদের আমি সম্পূর্ণরূপে ভাব-বিবর্জ্জিত মনে করতে পারি না। সম্ভবতঃ জগতের সর্ব্বত্র যারা কর্ম্মী তাদের সম্বন্ধে সাধারণতঃ এ-কথা খাটে।

সাধারণের মনে একটা ধারণা আছে যে, অপরাধীদের যখন ফাঁসিকাঠে নিয়ে যাওয়া হয় তখন তাদের একটা স্নায়বিক দৌর্ব্বল্য আসে এবং যারা কোন মহৎ উদ্দেশ্য-সাধনের জন্য প্রাণ দেয় তারাই শুধু বীরের মত মরতে পারে। এ ধারণাটা ঠিক নয়। এ সম্বন্ধে আমি কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছি এবং এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেচি যে, অধিকাংশক্ষেত্রেই সাধারণ অপরাধীরা সাহসের সহিত প্রাণ দেয়, এবং ফাঁসির দড়ি তাদের গলায় বসাবার আগে ভগবানের পায়েই আত্ম-নিবেদন করে। একেবারে ভেঙ্গে মুস্‌ড়ে পড়াটা বড় একটা দেখা যায় না। একবার এক কারাধ্যক্ষ আমাকে বলেছিলেন যে একজন ফাঁসির কয়েদী তাঁর কাছে স্বীকার করেছিল যে, সে একজনকে হত্যা করেছিল। সে তার কাজের জন্যে অনুতপ্ত কি না জিজ্ঞাসা করায় সে বলেছিল যে, তার মোটেই অনুতাপ হয় নি, কারণ হত ব্যক্তির বিরুদ্ধে তার ন্যায্য অনুযোগ ছিল। তারপর সে বীরদর্পে ফাঁসিকাঠে উঠেছিল এবং প্রাণ দিয়েছিল, কিন্তু একটী পেশীর সঙ্কোচনও তার বুঝতে পারা যায় নি।