শুধু এই কথা ভাবি—ঝগড়া করিবার জন্য এত লোক পাওয়া যায়—কিন্তু মিলাইতে পারে, মীমাংসা করিয়া দিতে পারে—এ রকম একজন লোকও কি আজ সারা বাঙ্গালার মধ্যে পাওয়া যায় না? এই দলাদলির জন্য বাঙ্গলা আজ শ্রীযুক্ত অনিলবরণ রায়ের মত স্বদেশসেবক হারাইয়াছে—আরও কয়জনকে হারাইবে তা কে বলিতে পারে? বাঙ্গালী আজি অন্ধ, কলহে বিষাদে নিমগ্ন, তাই এই কথা বুঝিয়াও বুঝিতেছে না। নিঃস্বার্থ আত্মদানের কথা আর তো কোথাও শুনিতে পাই না! অত বড় একটা প্রাণ নিজেকে নিঃশেষে বিলাইয়া মহাশূন্যে মিশিয়া গেল; আগুনের ঝলকার মত ত্যাগ মূর্ত্তিপরিগ্রহ করিয়া বাঙ্গালীর সম্মুখে আত্মপ্রকাশ করিল; সেই দিব্য আলোকের প্রভাবে বাঙ্গালী ক্ষণেকের জন্য স্বর্গের পরিচয় পাইল; কিন্তু আলোকও নিবিল, বাঙ্গালীও পুরাতন স্বার্থের গণ্ডীতে আশ্রয় লইল। আজ বাঙ্গলার সর্ব্বত্র কেবল ক্ষমতার জন্যে কাড়াকাড়ি চলিতেছে। যার ক্ষমতা আছে—সে ক্ষমতা বজায় রাখিতেই ব্যস্ত। যার ক্ষমতা নাই সে ক্ষমতা কাড়িবার জন্য বদ্ধপরিকর। উভয় পক্ষই বলিতেছে, “দেশোদ্ধার যদি হয়, তবে আমার দ্বারাই হউক, নয় তো হইয়া কাজ নাই।” এই ক্ষমতা-লোলুপ রাজনীতিকবৃন্দের ঝগড়া বিবাদ ছাড়িয়া, নীরবে আত্মোৎসর্গ করিয়া যাইতে পারে, এমন কর্ম্মী কি বাঙ্গলায় আজ নাই?
নিজেদের intellectual ও spiritual উন্নতি অবহেলা করিয়া যাহারা জনসেবায় আত্মনিয়োগ করিয়াছে তাহারা যে এই সব ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কলহবিবাদে সকলকে মত্ত দেখিয়া নিতান্ত নিরাশ হইয়া রাজনীতিক্ষেত্র হইতে সরিয়া পড়িবে, ইহাতে আর আশ্চর্য্য কি? নিজেদের মানসিক ও পারমার্থিক কল্যাণকে তুচ্ছ করিয়া যাহারা জনহিত ব্রতে ব্রতী হইয়াছে