পাতা:তরুণের স্বপ্ন - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
(৷৵৹)

আগ্রহ ও সাধনার প্রয়োজন তাহা আমরা আজও লাভ করিতে পারি নাই। তা না হইলে আজও দেশে নূতন জীবন ও নূতন কর্ম্মস্রোতের প্রেরণা দেখিতে পাইতেছি না কেন? অবশ্য কাগজে-কলমে হিসাব দিতে গেলে হয়ত আমরা বলিতে পারি—দেশে গণ-আন্দোলন এতগুণ বৃদ্ধি পাইয়াছে, শিক্ষিতের সংখ্যা এতবৃদ্ধি পাইয়াছে, ব্যবসায়-সংখ্যা এতগুলি বৃদ্ধি পাইয়াছে ইত্যাদি। কিন্তু এই সংখ্যা নির্ণয়ের উপরই কি আমাদের ব্যক্তিগত চরিত্রোৎকর্ষ প্রমাণিত হয়? বিভিন্ন চিন্তাধারার মধ্যে যে সংঘর্ষ দেখা দিয়াছে—নানারূপ বিরোধী সংঘ ও সমিতি প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়া তাহাও সুস্পষ্ট হইয়া উঠিতেছে। সকল চিন্তা ও কর্ম্মধারা সাফল্যমণ্ডিত করিবার যাহা প্রয়োজনীয় ও একমাত্র ভিত্তি—ব্যক্তিগত চরিত্রের উৎকর্ষ সাধন—তাহা আমরা কতদূর সাধন করিতে পারিয়াছি তাহাই হইল ‘তরুণের স্বপ্ন’র প্রথম ও শেষ প্রশ্ন। সকল সাধনা ও সাফল্যের গোড়ার কথা ব্যক্তিগত আত্মবিকাশ। এই আত্মবিকাশ করিতে না পারিলে শ্রেষ্ঠ চিন্তা ও প্রকৃষ্ট পন্থাও ব্যর্থ ও নিরর্থক হইয়া পড়ে! আজি তাই বাঙ্গলা দেশে জ্ঞানীর অভাব নাই, চিন্তাধারার অভাব নাই, কর্ম্মপন্থার অভাব নাই; কিন্তু যে মানুষ সকল চিন্তাকে সফল করিবে, সকল কর্ম্মকে জয়মণ্ডিত করিবে, সকল জ্ঞানকে দীপ্তিমণ্ডিত করিবে—সেই চরিত্রবান পুরুষের যেন একান্ত অভাব।

 এই শক্তিমান পুরুষই বাঙ্গলার একমাত্র কাম্য। এই পৌরুষ লাভই সকল তরুণের স্বপ্ন। আজ বাঙ্গলার তরুণশ্রেষ্ঠের এই স্বপ্ন সকল দেশবাসীকে উদ্‌বুদ্ধ ও জাগ্রত করিয়া তুলুক—এই বাসনায় পুনরায় তরুণের স্বপ্ন প্রিয় দেশবাসীর নিকট তুলিয়া ধরিলাম। ইতি—বৈশাখ ১৩৪৫।

শ্রীগোপাললাল সান্যাল