পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯০
তিতাস একটি নদীর নাম

আরম্ভ করিয়াছে। পাতা-জল ভাঙ্গিতে ভাঙ্গিতে এক সময়ে হাঁটু-জলে গিয়া পড়িল। হাঁটু-জল ক্রমে কোমড়-জলে গিয়া দাঁড়াইল। কটির কাপড় ভিজাইয়া কিশোর কোমড় জল ভাঙ্গিয়াই গুণ টানিতেছে। সুবল চাহিয়া চাহিয়া দেখিতেছিল। কিন্তু লক্ষ্য ছিল না। যখন লক্ষ্য হইল, সে হা হা করিয়া উঠিল, ‘অ কিশোর দাদা, তুমি করতাছ কি? গুণ মার, গুণ মার। নাইল্যা ক্ষেতে অখন পানক সাপ থাকে। তুমি গুণ মাইরা নাওএ উঠ।’

 চৈতন্য পাইয়া কিশোর গুণ মারিয়া নৌকায় উঠিল।

 সুবল তিরস্কার করিল, ‘দাদা, তোমারে কি মধ্যে মধ্যে ভূতে আমল করে?’

 সে-কথার জবাব না দিয়া কিশোর বলিল, ‘ভাই, আর কদিনের পথ সামনে আছে?’

 ‘ইখান থাইক্যা আগানগরের খাড়ি একদিনের পথ। আর একদিন একটানা নাও বাইতে পারলে ভৈরব ছাড়াইয়া নাও রাখুম নিয়া কলাপুড়ার খাড়িতে। সেইখান থাইক্যা তিতাসের মুখ আর এক দুপরের পথ।’

 হিসাব মত একদিনে আগানগরের খাড়ি পাওয়া গেল। সেখানে রাত কাটাইয়া নৌকা খোলা হইল। কিন্তু একদিনের স্থলে দুই দিন গত হইয়া যায়, ভৈরব বাজার আর দেখা দেয় না।

 সামনা হইতে হু হু করিয়া জোরালো বাতাস আসিতেছে। মেঘনার বুক জুড়িয়া ঢেউয়ের তোলপাড় চলিয়াছে। নৌকা এক হাত আগায়, তো আর এক হাত পিছাইয়া যায়। দুইটি