পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/১০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯২
তিতাস একটি নদীর নাম

শেষে তারা ঝিমাইয়া পড়ার আগে দুর্যোগ নিজেই ঝিমাইয়া পড়িল। যে বাতাস দৈত্যের নাসিকা গর্জনের মত বহিতেছিল, তাহা এখন প্রজাপতির পাখার হাওয়ার মত কোমল হইয়া গেল। মেঘনার বুকের আলোড়ন থামিয়া একেবারে স্তব্ধ হইয়া গেল।

 এইত ভৈরবের বন্দর। এখানে আসিয়া মনে হইল বাড়ির কাছেই আসিয়াছি। স্রোতের আড় পাইয়া নৌকা অল্প মেহনতেই হু হু করিয়া ছুটিয়া চলিয়াছে। ভৈরব বন্দরের মালোপাড়া দেখিতে দেখিতে অনেক পিছনে পড়িয়া গেল। তাহাদিগকে সমুখে আগাইবার নেশাতে পাইয়াছে। এই কলাপুড়ার খাড়ি। নৌকা বাঁধিবার চমৎকার জায়গা। কিন্তু আকাশের কোণে আরও একটু বেলা রহিয়াছে। কিশোর বলিল, ‘চলুক নাও। রাখুম গিয়া একেবারে নয়া গাঙের খাড়িতে। যত আগাইতে পার আগাও।’

 সূর্য ডুবিবার আগেই নয়া গাঙ দেখা দিল।

 এখানে নয়া গাঙের এক দূরন্ত ইতিহাস মনে পড়ে।

 মেঘনা সরল হইয়া চলিতে চলিতে এই খানটায় একটু কোমর বাঁকাইয়াছিল। পশ্চিম পারে ছিল একটা খালের মুখ। বর্ষায় জলে ভরিয়া উঠিত আর সুদিনে শুখাইয়া ঠন্‌ঠনে হইয়া যাইত। কখনো কখনো সামান্য একটু জল থাকিলে তাহাতে বৈকুণ্ঠপুর আর তাতারকান্দী গাঁয়ের ছেলেরা গামছায় ছাঁকিয়া পুঁটিমাছ ধরিত। সেই খালেরই মুখ। একদিন সে মুখে ফুলচন্দন পড়িল। কি করিয়া মেঘনার এইখানটাতে