পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/১০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
৯৩

একটা স্রোতের বড় আবর্তের সৃষ্টি হইল, আর খালের মুখে ধরিল সর্বনাশা ভাঙ্গন। ভাঙ্গিয়া চুড়িয়া মুচড়াইয়া দুমড়াইয়া মেঘনার অকৃপণ জলরাশি আছড়াইয়া পড়িতে লাগিল খালের দুই দিকের পাড়ে। তাতেও ধরিল ভাঙ্গন। হু হু করিয়া ছুটিয়া চলিল স্রোত। সাঁই সাঁই করিয়া ফুটিল আবর্ত। হিস্ হিস্ করিয়া জাগিল উচ্ছ্বাস। হুস্ হুস্ করিয়া পড়িতে লাগিল মাটির ধ্বস। মাটি ক্ষেত প্রান্তর ভাঙ্গিয়া, ছোট বড় পল্লী নিশ্চিহ্ন করিয়া, রাশি রাশি গাছপালা ছিন্নবিচ্ছিন্ন করিয়া সে জলধারা দিনের পর দিন উদ্দাম গতিতে ছুটিয়া চলিল। কার সাধ্য তার গতিরোধ করে। দুর্বার, দুর্মদ, প্রলয়ঙ্কর এ গতি। চাষীরা প্রমাদ গণিয়া অকালে ফসল কাটিয়া ঠাঁই করিয়া দিল, পল্লীবাসীরা সন্ত্রাসে বিমূঢ় হইয়া তৈজসপত্র বাঁধিয়া ছাঁদিয়া, গরুবাছুর হাঁকাইয়া লইয়া, অনেক পশ্চিমে গিয়া ডেরা বাঁধিল। কালক্রমে অনেক কিছু হইয়া গেল। যে ছিল একদা একটা খাল, সে এখন স্বয়ং মেঘনা হইতেও অনেক প্রশস্তা, অনেক বেগবতী, সমধিক ভয়ঙ্করী হইয়া উঠিয়াছে। সবিস্তারে এই কাহিনী বর্ণনা করিতে করিতে তিলকের চোখ দুইটি উজ্জ্বল হইয়া উঠিল। কথা কিছু নূতন নয়। তাদের গাঁয়ের মালোরা অনেকেই এখানে মাছ ধরিতে আসে। আর নয়া গাঙের নয়া স্রোতে মাছও ধরা পড়ে অনেক। কিশোর সুবলেরাও নয়া গাঙের এই কালান্তক, দিগন্তবিসারী মোহনাটি কয়েকবার দেখিয়াছে, কাহিনীটিও শুনিয়াছে। তবু তিলক তাহা আবেগপূর্ণ ভাষা দিয়া বিস্তারিত-