পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/১৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩২
তিতাস একটি নদীর নাম

না। পৈতা ধরিয়া যখন রাজাকে অভিশাপ দিবার জন্য গর্জন করিতে করিতে সামনের দিকে ঝুঁকিয়া পড়েন, তখন আসরের চারিপাশের গরীব লোকগুলি তো দূরের কথা, অমন যে রাজা, হাতে তলোয়ার গায়ে ঝক্‌মক্ করা পোষাক, সেও থর-থর করিয়া কাঁপিতে কাঁপিতে তাঁর পায়ের কাছে নত হয়। এমন তেজ এই জনের। নাম দয়ালচাঁদ।

 জানিবার ও বুঝিবার মত আরো কয়েকজন এই দলে ছিল। সময় অল্প। দুই-এক কথাতে সুবলার বৌ দুইএকজনের পরিচয় দিল। এই জনের নাম নিতাইকিশোর। ঘুষ খাইয়া পেট মোটা করিয়াছে, কিন্তু চালে এক মুঠা ছন নাই। আর এই যে কানামানুষ, তিনি লোকের বিচার করিতে গিয়া ‘শ্বশুরের বিছানায় বউ শোয়ায়, জামাইর বিছানায় শাশুড়ী শোয়ায়’, তার নাম কৃষ্ণচন্দ্র। এই ‘দেড় নিয়তির’ জন্য চক্ষুধন খাইয়াছে।

 আসরের চারিধারের আর যত সব নর-নারায়ণ, তারা কেবল কথা শোনার লোক, তামাক টানার লোক। কয়েকটি ছেলে হুকাকল্কি মালসা ডিবা লইয়া বসিয়া গিয়াছে। অনবরত ছিলিম ধরাইয়া হাতে হাতে চালাইয়া দিতেছে, আর সে সব হুকা পুরানো হইয়া পর পর তাদের হাতে ফিরিয়া আসিতেছে।

 একটা পরিষ্কার ঝক্‌ঝকে বড় কাঁসার থালাতে কয়েক বিড়া ধোয়ামোছা পান, সুচিক্কণ সুপারি, মাজাঘষা কয়েকখানি বাটিতে চুন ও অন্যান্য মসলা। থালাখানা হাতে করিয়া