মধ্য বিছানায় নমস্কার করল ভারত, ‘দশজন পরমেশ্বর, আমার একখান কথা। পান নি দেওয়ার সময় অইছে?’
সকলেই সম্মতিসূচক দৃষ্টিতে তাকাইল। পরে রামপ্রসাদের দৃষ্টির ইঙ্গিত পাইয়া ভারত নিজে মাতবরদিগকে পান বাটিয়া দিল। পরে পাড়ার একটি ছেলের হাতে থালাখানা তুলিয়া দিল। সে ক্ষিপ্রহস্তে এই জনারণ্যে পান বাটা শুরু করিল। কিন্তু শেষ না করিতেই বৈঠকের ‘কথা’ আরম্ভ হইয়া গেল।
দয়ালচাঁদ দুর্বাসাসুলভ ভঙ্গিতে চারিদিকে তাকাইয়া লইল। তারপর রামপ্রসাদের মুখের উপর চোখ তুলিয়া জিজ্ঞাসু হইল।
রামপ্রসাদের বয়স হইয়াছে। রঙ্ ইষৎ তাম্রবর্ণ। যৌবনে এর সোনার কান্তি ছিল। চামড়ার বার্ধক্য ঠেলিয়া নিজেকে জাহির করিয়াছে যে মোটা হাড়গুলি তারাই প্রমাণ দেয়, যৌবনে এর শরীরে অসুরের শক্তি ছিল। চোখ দুটিতে দেবসুলভ আবেশ। তার মধ্যে থেকেই দৃঢ়তার ক্ষাত্রতেজ ফুটিয়া বাহির হইতেছে। সৃষ্টিশীল প্রতিভা যেন এখনো তাঁর মধ্যে আত্মপ্রকাশ খুঁজিয়া ফিরিতেছে। কোন্ এক সত্যবস্তুর সন্ধানে সুদূরে মেলিয়া রাখিয়াছে তাহার অনন্ত প্রশ্নের জবাব-না-পাওয়া বড় বড় দুটি চোখ।
দয়ালের নীরব জিজ্ঞাসায় সে চোখ প্রথমেই পড়িল কৃষ্ণচন্দ্রের উপর, ‘কই নগরের বাপ, কথা তোল।’
অন্ধের চোখ তুলিয়া চাওয়া না চাওয়া সমান। সে চোখ নিচের দিকেই নিবিষ্ট রাখিয়া খানিক পিট পিট করিয়া লইল, তারপর ভদ্র গলায় বলিল, ‘ভারত কই রে।’