পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/১৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
১৪৭

দল কাঁধে-কাঁধে কোমরে-কোমরে ধরিয়া বীরের নাচ নাচিত। সারা উঠান কাঁপিয়া উঠিত। গান যা জমিত!

 ‘বাহারুল্লা ভাই, গানগুলি কি ভাল লাগত! এই দুইটা গানের সুর অখনো মরমে গাঁথা হইয়া আছে—‘মনে লয় উড়িয়া যাই কারবালার ময়দানে,’ আর ‘জয়নালের কান্দনে, মনে কি আর মানে রে, বিরিক্ষের পত্র ঝরে।’

 ‘হ মাত্‌বর, এই সগল গানই খুব জমত। আরেকটা গানও বেশি জমত, মনে পড়ে নি মাত্‌বর,—‘বাছা তুমি রণে যাইওনা, চৌদিকে কাফিরের দেশ, জহর মিলে ত পানি মিলে না।’ এই সগল গান ক বছর শুনি না। আমার এই উঠানে জারিগান কতবার হইছে।’

 সে গানে মালোরাও নিমন্ত্রণ পাইত। রামপ্রসাদ কতদিন এই উঠানেই বসিয়া শুনিয়াছে। বীররস করুণরসের এসকল গান শুনিতে বসিলে ওঠা যায় না। কয়েক বৎসর ভাল ফসল হয় না। চাষীরা কেবলই দেনায় জড়াইয়া যাইতেছে। লোন-কোম্পানীর টাকা আনিয়া কত চাষী আর শোধ করিতে পারে নাই বলিয়া প্রতি কিস্তিতে কত শাসানি কত ধমক খাইয়া মরিতেছে। জারি গাহিবে তারা কোন্ আনন্দে? এবার ভাল ধান হইয়াছে। সে ধান তুলিয়াই সারা হইতেছে। জারিগান গাহিবার সময় কই?

 ‘মালোগুষ্টির কালীপূজার দেরি কি, মাত্‌বর?’

 ‘বেশি দেরি নাই। সামনের আমাবস্যায়।’

 ‘এইবার গান দিবা না?’