পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/১৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
১৫১

জালের নিচেকার বুনানো আলোছায়ায় তার মাটিমাখা কালো শরীরটা চিক্‌চিক্‌ করিয়া উঠিল। একটু অস্বাভাবিক ফোলা শরীর।

 রামপ্রসাদ দেখিয়া চিনিল!

 সে ঝুলানো হাত দুটি ঘনঘন নাড়িতে নাড়িতে মুখ বাড়াইয়া আক্রমণের ভঙ্গিতে আগাইয়া আসিল। রামপ্রসাদের মুখের কাছে মুখ আনিয়া বিকৃতমুখে ম্লান একটু হাসিয়া বিজ্ঞের মত আস্তে বলিল, ‘অ, মাত্‌বর, অতদিন পরে। আচ্ছা বারিন্দায় উঠ, দেখ কি কাণ্ডখান হইয়া আছে।’

 ‘কি কাণ্ড হইয়া আছে। আরে শালা কি কাণ্ড।’

 ‘দেখ না গিয়া।’

 হাত ধরিয়া বারান্দায় তুলিয়া নিয়া দেখাইল। দা দিয়া মাটিতে তিন চারটা গর্ত খুঁড়িয়াছে। লম্বা গর্ত। একটার মুখ খুঁড়িতে খুঁড়িতে আরেকটার গায়ের উপর তুলিয়া দিয়াছে। সেইখানে আঙ্গুল ঠেকাইয়া বলিল, ‘দেখ চাইয়া, কি হইতাছে। মাইয়া চুরি হইতাছে! এই তোমার মেঘনা গাঙ্, অইখানে খাড়ি। খাড়িতে আছিল নাও, বড় গাঙে কি কইরা গেল। জাইগ্যা দেখি মাইয়াচুরি হইতাছে। বাইরে জোছনা ফট্‌ফট্‌ করে, ভিতরে আন্ধাইরে মাইয়া চুরি হয়। তুমি কি কও মাত্‌বর।’

 রামপ্রসাদ কিছুই কহিল না। তিতাসের শুশুক মাছগুলি যেমন সন্ধ্যার ছায়া পাইয়া ভাসিয়া নিঃশ্বাস ছাড়ে, জালের পুঁটুলিগুলির উপর বসিতে বসিতে তেমনি ফোস্ করিয়া একটা নিঃশ্বাসের শব্দ তার নাক দিয়া বাহির হইল।