পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/২৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২২
তিতাস একটি নদীর নাম

একটার ওজন। নৌকার বাতা ডুবে-ডুবে। তার উপর বৃষ্টির জল। এখনি না সেচিতে পারিলে হয়ত কোনো এক সময় টুপ্ করিয়া ডুবিয়া যাইবে। বোঝাই নাও, সেউতি ঢুকে না। কাদির মিয়া হতবুদ্ধি হইয়া যায়। শুক্‌নো বাঁশপাতার মাথালটা চিবুক বেড়াইয়া মাথায় আঁটা। তাতে কেবল মাথাটাই বাঁচে। সমস্ত শরীরে লাগে বৃষ্টির অবারণ ছাঁট। মাথালশুদ্ধ মাথা বাঁকাইয়া কাদির তাকায় আকাশের দিকে আর কাদিরের ছেলে চায় বাপের মুখের দিকে। চার দিক একেবারে শূন্য দেখা যায়, মাথায় কোন বুদ্ধি জোগায় না। বাপ বলিতে থাকে, ‘অত মে’ন্নতের সাগরগঞ্জ আলু, বেবাক বুঝি যায় রসাতলে।’ ছেলে বলে, ‘বা-জান তুমি সাঁতার দিয়া পারে যাও। গরীবুল্লার গাছের তলায় গিয়া জান বাঁচাও, আমার যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ। যখন দেখুম নাও ডুবতাছে, দিমু সব আলু ঢাইল্যা তিতাসের পানিত। তারপর ডুবা নাও পারে লাগাইয়া তোমারে ডাক দিমু।’

 এমন সময় দেখা গেল পরিচিত জেলেনৌকা, সন্ধ্যায় ঘরে-ফেরা সাপের মত তিতাসের দীঘল বুকে সাঁতার দিয়াছে। দুই দাঁড় এক কোরা মচ্‌মচ্ ঝুপ্‌ঝাপ্ করিয়া চলিয়াছে, জল কাটিয়া, ঢেউ তুলিয়া। তার ঢেউ লাগিয়াই বুঝিবা ছোট আলুর নৌকা ডুবিয়া যায়। কাদির ডাকিয়া বলে, ‘কার নাও!’

 পাছার কোরা হইতে ধনঞ্জয় ডাকিয়া বলে, ‘অ বনমালী, সেওতখান তাড়াতাড়ি বাইর কর। একটা অলুর নাও ডুব্‌তাছে।’