পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/২৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তিতাস একটি নদীর নাম
২৫১

বেশি কথা বলে, আর কথায় কথায় ছড়া কাটে, দুনিয়ায় তার পরিচয় দিবার উপলক্ষ্য মাত্র দুইটি—এক, সাদকপুরের বনমালীর বোন বলিয়া, আর দুই, লবচন্দ্রের বউ বলিয়া। তবে এখানে প্রথমোক্ত নামে তার পরিচয় বেশি নাই, শেষোক্ত নামেই সে মালোপাড়ায় অভিহিত। কথার মাঝে মাঝে সুন্দর ছড়া কাটিতে পারে বলিয়া সকল নারীরা তাকে একটু সমীহ করে; সে যেন দশজনের মাঝে একজন। শ্রাদ্ধের দিন অনেক নারী দেখিতে আসিল। সেও আসিল। নাপিত আসিয়া অনন্তর মস্তক মুণ্ডন করিয়া গেল। অনন্ত কতকগুলি খড়ের উপর শুইত, সেই খড়গুলি, হাতের আধছেঁড়া নিত্যসঙ্গী কুশাসনখানা, কাঁধের ও কটিদেশের মাঠা-কাপড়ের চিলতা দুইখানা সেই নারীর কথামত নদীতীরে ঘাটের একটু দূরে কাদায় পুঁতিয়া স্নান করিয়া আসিল। পুরোহিত চাউলভরা পাঁচটি মালসাতে মন্ত্র পড়িয়া অনন্তর মাতৃশ্রাদ্ধ সমাধা করতঃ একটা সিকি ট্যাঁকে গুজিয়া চলিয়া গেলে, সেই স্ত্রীলোকটি তাড়া দিল, ভাত বাড়নের কত দেরি! কড়া ডিগা মানুষ। ভুখে মরতাছে!’

 সুবলার বউর এক হাতে সব কাজ করিয়া উঠিতে দেরি হইল। তবু সে পরিপাটি করিয়া পাঁচটি ব্যঞ্জন রাঁধিল। অনন্ত এক স্থানে বসিয়া পড়িয়াছিল। মাসীর মা খেঁকাইয়া উঠিল, ‘নিষ্কর্মা গোঁসাই, আরে আমার নিষ্কর্মা গোঁসাই, একটা কলার খোল কাইট্যা আন্‌তে পারলে না!’

 সেই নারী প্রতিবাদ করিল, ‘চিরদিন গালি দিও মা,