পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/২৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮০
তিতাস একটি নদীর নাম

এতক্ষণ বিশ্রী নীরবতার মধ্যে তার ভাল লাগিতেছিল না। আর এক ফোঁটা একটা ছেলের সঙ্গে কিই বা কথা বলিবে! আলাপ জমিবে কেন? পাড়া গুলজার করাই যার কাজ, নির্জন নদীর বুক গুলজার করিবে সে কাকে লইয়া? শ্রোতা কই, সমজদার কই? কিন্তু অনন্ত আর সব ছেলেদের মত অত বোকা নিরেট নয়। আর সব ছেলেরা যখন চোখ বুজিয়া ঘুমায় অনন্ত তখন অজানাকে জানিবার জন্য আকাশের তারার মতই চোখ দুটি জাগাইয়া রাখিয়াছে। আর উদয়তারার ছড়াটিও তারারই সম্বন্ধে, ‘সু-ফুল ছিট্যা রইছে, তুলবার লোক নাই; সু-শয্যা পইড়া রইছে, শুইবার লোক নাই,—ক দেখি অনন্ত এ-কথার মান্‌তি কি?

 এ-কথার মানে অনন্ত জানে না; কিন্তু জানিবার জন্য তার চোখ দুইটি চক্চক্ করিয়া উঠিল।

 ‘সুফুল ছিট্যা রইছে—এই কথার মান্‌তি আসমানের তারা। আসমানে ছিট্যা রইছে, তুলবার লোক নাই।’

 অনন্ত ভাবে ছিটিয়া থাকে বটে! মানুষের হাত অত দূরে নাগাল পাইবে না। কিন্তু স্বর্গে যে দেবতারা থাকে। রাম, লক্ষ্মণ, কৃষ্ণ, দুর্গা, কালী, শিবঠাকুর, তারাও কি তুলিতে পারে না?

 তারা ইচ্ছা করিলে তুলিতে পারে, কিন্তু তোলে না। তারাই ছিটাইয়া দিয়াছে, তারাই তুলিবে? রোজ রাতে ছিটাইয়া দিয়া তারা মানুষেরে ডাকিয়া বলিয়া দেয়, দিলাম ছিটাইয়া কেউ যদি পার তুলিয়া নাও। কিন্তু তুলিবার লোক নাই। এখন দেবতার পূজা হইবে কি দিয়া! শেষে তারা