পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/২৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮৬
তিতাস একটি নদীর নাম

 পান সুপারির তিনকোণা থলে, একখানা কাপড় আর টুকিটাকি জিনিসের একটা ছোট পুঁটলি গুছাইয়া উদয়তারা অনন্তর হাত ধরিয়া মাটিতে পা দিল।

 দিশ কইরা পা বাড়াইবি অনন্ত, না হইলে পইড়া যাইবি! যে পিছলা।’

 পদে পদে পতনোন্মুখ অনন্ত শক্ত করিয়া উদয়তারার হাতখানা ধরিয়া বলিল, ‘আমি পইড়া যাই। তুমি ত পড় না?’

 ‘আমার বাপ-ভাইয়ের দেশ। চিনা-পরিচিত সব। বর্ষায় কত লাই-খেলা খেলাইছি, সুদিনে কত পুতুলখেল খেলাইছি।’

 খেলায় বুঝি খুব নিশা আছিল তোমার!’

 ‘আমার আর কি আছিল। নিশা আছিল আমার বড় ভইন নয়নতারার। ছোট ভইন আসমানতারারও কম আছিল না। এই খেলার লাগি মায়ে বাবায় কত গালি দিছে। পাড়ার লোকে কত সাত কথা পাঁচ কথা শুনাইছে। তিন ভইন একসাথে খেলাইছি বেড়াইছি, কেউরে গেরাহ্য কর্‌ছি না। তারপর তিন দেশে তিন ভইনের বিয়া হইয়া গেল।’

 ‘সেই অবধি দেখা নাই বুঝি?’

 ‘না। গাঙে গাঙে দেখা হয়, তবু ভইনে ভইনে দেখা হয় না। বড় ভালমানুষ আমার বড় ভইন নয়নতারা আর ছোট ভইন আসমানতারা।’

 তারার মেলা। অনন্ত নামগুলি একবার মনে মনে আওড়াইয়া লইল।