বনমালীর একার সংসার। বাহির হইতে দরজা বন্ধ করিয়া গিয়াছিল। ফিরিয়া আসিয়া দেখে অত রাতে ঘরের ভিতর আলো জ্বলিতেছে। আশ্চর্য হইবার কথা। সাড়াশব্দ না করিয়া উদয়তারা হাঁটুর সাহায্যে দরজায় ধাক্কা দিলে দরজা মেলিয়া গেল এবং আশ্চর্যের সহিত দেখা গেল নয়নতারা আসমানতারা দুইজনে ঘরে বসিয়া গল্প করিতেছে—মেঝে। বোন উদয়তারারই গল্প। অতদিন পরে দুই বোনেরে একসঙ্গে পাইয়া উদয়তারা কি বলিবে ভাবিয়া পাইল না। কিন্তু আনন্দে চোখ দিয়া জল আসিয়া পড়িল। কি করিয়া আসিল তারা এ দারুণ বর্ষাকালে?
আসার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: বিদেশে মাছ ধরিতে গিয়। দুইজনের বরের দেখা হয়। তারা ঠিক করিয়া ফেলে, অমুক মাসের অমুক তারিখে পরিবার নিয়া এখানে মিলিত হইবে। সেকথার কেহই খেলাপ করে নাই।
‘তারা দুইজনা কই?’
‘পাড়া বেড়াইতে গেছে।’
‘তোরা পাড়া বেড়াইতে গেলি না?’
‘আমরা রাইতে পাড়া বেড়াই না, বেলাবেলি পাড়া বেড়ান শেষ কইরা ঘরে দুয়ারে খিলি দিয়া রাখি। তোরা গোকনগাঁয়ের মানুষেরা বুঝি রাইতে পাড়া বেড়াস্?’
বড় বোনের দিকে চোখ নাচাইয়া উদয়তারা গুনগুন করিয়া উঠিল, ‘জানি গো জানি নয়ানপুরের মানুষ; সবই জানি; অত ঠিসারা কইর না।’