পাতা:তিতাস একটি নদীর নাম.djvu/৩৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪০
তিতাস একটি নদীর নাম

 ছাদিরের কাঠ কেনার প্রসঙ্গে একদিন ঘরে আলোচনা হইল।

 ছাদির বলিল, ‘সে এক পরস্তাব।’

 গল্পের আভাস পাইয়া রমু তার কোল ঘেঁষিয়া বসিল এবং প্রকাণ্ড একটা বিস্ময়-ভরা জিজ্ঞাসা লইয়া বাপের মুখের দিকে তাকাইয়া রহিল।

 তারা নাকি দুজন মালো। গায়ে নাকি তাদের হাতীর মতন জোর। নামও তাদের তেমনি জমকালো—একজনের নাম ইচ্ছারাম মালো, আরেকজনের নাম ঈশ্বর মালো—নিবাস নবীনগর গাঁয়ে।

 তারা কি করিয়াছে, না, পাহাড় হইতে বহিয়া আসে যে জলের স্রোত, তারই সঙ্গে সঙ্গে কোমরে কাছি বাঁধিয়া বড় বড় গাছের গুঁড়ি টানিয়া নামাইয়াছে। সে গাছের গুঁড়ি চিরিয়া তক্তা করা হইবে, তাহাতে তৈয়ারী হইবে ছাদিরের দৌড়ের নৌকা, সে নৌকা সে হাজার বৈঠা ফেলিয়া আরও দশবিশটা দৌড়ের নৌকার সঙ্গে পাল্লা দিয়া দৌড়াইবে, আর সব নৌকাকে পাছে ফেলিয়া জয়লাভ করিবে, করিয়া মেডেল পাইবে, পিতলের কলসী পাইবে আর পাইবে বড় একটা খাসি।

 ‘বেহুদা—একেবারে বেহুদা! এর লাগি কত হাঙ্গামা কইরা নাও গড়াইবি?’ কাদির টাকা দিবার পর একদিন প্রশ্ন করিয়াছিল।

 ছাদিরও জবাব দিয়াছিল, ‘জিনিসগুলি খুব থোরা দেখলা, না? কিন্তুক, জিত্‌লে খালি তোমার আমার গৈরব না, সারা বিরামপুর গাঁওয়ের গৈরব।’