মনে বিষম ভাবনা। কি জানি কি একটা হইব। মনে শান্তি নাই, চক্ষে নিদ্রা নাই। আছে খালি ভাবনা। কাল রাইতে মড়াপোড়ার টেকে জাল পাতলাম, মাছ উঠল না; গেলাম পাঁচভিটার টেকে, মাছ নাই; গেলাম গরীবুল্লার গাছের ধারে, কিন্তু জালে-মাছে এক করতে পারলাম না। যেখানেই যাই, দেখি সোত মন্দা। মাছেরা দূরে দূরে লাফায়, জালে পড়ে না। শেষে গেলাম কুড়ুইলার খালের মুখে। দেখলাম, সোত খালি লাটুমের মত ঘোরে। জাল নামাইয়া পাটাতনের উপর কাত হইলাম। চোখে ঘুম নাই। কেবল একই চিন্তা, তিতাসের কি জানি কি যেন একটা হইতাছে। কোন্ একসময় চোখের পাতা জোড়া লাগল টের পাইলাম না। এমন সময় দেখলাম স্বপ্ন, তিতাস শুখাইয়া গেছে। এই স্বপ্ন কি মিছা হইতে পারে। দেখলাম, যে-গাঙে বিশ-হাতি বাঁশ ডুবাইয়া তলা ছোঁয়া যায় না, সেই গাঙের মাঝখান দিয়া ছোট একটা মানুষ হাঁইট্যা চলছে। যে যে জায়গা দিয়া সে গেছে, একটু পরেই দেখলাম সেই সগল জায়গায় আর জল নাই; শুক্না। ঠন্ ঠন্ কর্তাছে। বুকটা ছাৎ কইরা উঠল। হাত পাও কাঁপতে লাগল। নাওয়ে আমি একলা। এমুন ডর করতে লাগল যে একবার চিৎকার দিয়া উঠ্লাম। শেষে তিনবার রাম নাম লওয়াতে ডর কম্ল। এমন স্বপ্ন দেখলে নি আর ঘুম হয়। ঘুমাইলাম না।’
শ্রোতারা সমবেদনা জানাইল, আহা বড় দুঃস্বপ্ন দেখিয়াছে রাধাচরণ। মাথায় তেল দিয়া স্নান কর গিয়া।