পাতা:তিনসঙ্গী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১১২
তিন সঙ্গী

১১

ল্যাবরেটরির চার দিকে অনেকখানি জমি ফাঁকা আছে। কাঁপন বা শব্দ যাতে যথাসম্ভব কাজের মাঝখানে না পৌঁছয়। এই নিস্তব্ধতা কাজের অভিনিবেশে রেবতীকে সহায়তা করে। তাই ও প্রায়ই এখানে রাত্রে কাজ করতে আসে।

 নীচের ঘড়িতে দুটো বাজল। মুহূর্তের জন্য রেবতী তার চিন্তার বিষয় ভাবছিল জানালার বাইরে আকাশের দিকে চোখ মেলে।

 এমন সময়ে দেওয়ালে পড়ল ছায়া। চেয়ে দেখে ঘরের মধ্যে এসেছে নীলা। রাত-কাপড় পরা, পাতলা সিল্কের শেমিজ। ও চমকে চৌকি থেকে উঠে পড়তে যাচ্ছিল। নীলা এসে ওর কোলের উপর বসে গলা জড়িয়ে ধরল। রেবতীর সমস্ত শরীর থর থর করে কাঁপতে লাগল, বুক উঠতে পড়তে লাগল প্রবলবেগে। গদ্‌গদ কণ্ঠে বলতে লাগল, “তুমি যাও, এ ঘর থেকে তুমি যাও।”

 ও বললে, “কেন।”

 রেবতী বললে, “আমি সহ্য করতে পারছি নে। কেন এলে তুমি এ ঘরে।”

 নীল ওকে আরো দৃঢ় বলে চেপে ধরে বললে, “কেন, আমাকে কি তুমি ভালোবাসো না।”

 রেবতী বললে, “বাসি, বাসি, বাসি। কিন্তু এ ঘর থেকে তুমি যাও।”

 হঠাৎ ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল পাঞ্জাবী প্রহরী। ভর্তসনার কণ্ঠে বললে, “মায়িজি, বহুত শরমকি বাৎ হ্যায়, আপ বাহার চলা যাইয়ে।”

 রেবতী চেতন-মনের অগোচরে ইলেকট্রিক ডাকঘড়িতে কখন চাপ দিয়েছিল।

 পাঞ্জাবী রেবতীকে বললে, “বাবুজি, বেইমানি মৎ করো।”

 রেবতী নীলাকে জোর করে ঠেলে দিয়ে চৌকি থেকে উঠে