পাতা:তিনসঙ্গী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১১৪
তিন সঙ্গী

 “কিছুই তো জানবার দরকার নেই। এইটুকু জানলেই হবে ব্রজেন্দ্রবাবু এই ক্লাবের পেট্রন।”

 “আমি তো ব্রজেন্দ্রবাবুকে জানি নে।”

 “এইটুকু জানলেই হবে, মেট্রপলিটান ব্যাঙ্কের তিনি ডাইরেক্টর। লক্ষ্মী আমার, জাদু আমার, একটা সই বৈ তো নয়।” ব’লে ডান হাত দিয়ে তার কাঁধ ঘিরে তার হাতটা ধরে বললে, “সই করো।”

 সে স্বপ্নাবিষ্টের মতো সই করে দিলে।

 কাগজটা নিয়ে নীলা যখন মুড়ছে দরোয়ান বললে, “এ কাগজ আমাকে দেখতে হবে।”

 নীলা বললে, “এ তো তুমি বুঝতে পারবে না।”

 দরোয়ান বললে, “দরকার নেই বোঝবার।” বলে কাগজটা ছিনিয়ে নিয়ে টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেললে। বললে, “দলিল বানাতে হয় বাইরে গিয়ে বানিয়ো। এখানে নয়।”

 রেবতী মনে মনে হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। দরোয়ান নীলাকে বললে, “মাজি, এখন চলে তোমাকে বাড়ি পৌঁছিয়ে দিয়ে আসিগে।” বলে তাকে নিয়ে গেল।

 কিছুক্ষণ পরে আবার ঘরে ঢুকল পাঞ্জাবী। বললে, “চার দিকে আমি দরজা বন্ধ করে রাখি, তুমি ওকে ভিতর থেকে খুলে দিয়েছ।”

 এ কী সন্দেহ, কী অপমান। বারবার করে বললে, “আমি খুলি নি।”

 “তবে ও কী করে ঘরে এল।”

 সেও তো বটে। বিজ্ঞানী তখন সন্ধান করে বেড়াতে লাগল ঘরে ঘরে। অবশেষে দেখলে রাস্তার ধারের একটা বড়ো জানলা ভিতর থেকে আগল দেওয়া ছিল, কে সেই আগলটা দিনের বেলায় এক সময়ে খুলে রেখে গেছে।

 রেবতীর যে ধূর্ত বুদ্ধি আছে এতটা শ্রদ্ধা তার প্রতি দরোয়ানজির ছিল না। বোকা মানুষ, পড়াশুনো করে এই পর্যন্ত তার তাকত।