পাতা:তিনসঙ্গী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৬
তিন সঙ্গী

এলে কেন।”

 “কেননা, জানি তুমি দর-কষাকষি করবে না।”

 “তার মানে কলকাতার বাজারে আমিই কেবল ঠকবার জন্যে তৈরি হয়ে আছি?”

 “তার মানে ভালোবাসা খুশি হয়ে ঠকে।”

 এমন মানুষের ’পরে রাগ করা শক্ত, জোরের সঙ্গে বুক ফুলিয়ে ছেলেমানুষি। কিছুতে যে লজ্জার কারণ আছে তা যেন ও জানেই না। এই ওর অকৃত্রিম অবিবেক, এই যে উচিত-অনুচিতের বেড়া অনায়াসে লাফ দিয়ে ডিঙিয়ে চলা, এতেই মেয়েদের স্নেহ ওকে এত করে টানে। ভর্তসনা করবার জোর পায় না। কর্তব্যবোধকে যারা অত্যন্ত সামলে চলে মেয়েরা তাদের পায়ের ধুলো নেয়। আর যে-সব দুর্দাম দুরন্তের কোনো বালাই নেই ন্যায়-অন্যায়ের, মেয়েরা তাদের বাহবন্ধনে বাঁধে।


ডেস্কের ব্লটিঙকাগজটার উপর খানিকক্ষণ নীল পেনসিলের দাগকাটাকাটি করে শেষকালে বিভা বললে, “আচ্ছা, যদি আমার হাতে টাকা থাকে, তবে অমনি তোমাকে দেব। কিন্তু তোমার ঐ ঘড়ি আমি কিছুতেই কিনব না।”

 উত্তেজিত কণ্ঠে অভীক বললে, “ভিক্ষা? তোমার সমান ধনী যদি হতুম, তা হলে তোমার দান নিতুম উপহার বলে, দিতুম প্রত্যুপহার সমান-দামের। আচ্ছা, পুরুষের কর্তব্য আমিই বরঞ্চ করছি। এই নাও এই ঘড়ি, এক পয়সাও নেব না।”

 বিভা বললে, “মেয়েদের তো নেবারই সম্বন্ধ। তাতে কোনো লজ্জা নেই। তাই বলে এ ঘড়ি নয়। আচ্ছা শুনি, কেন তুমি ওটা বিক্রি করছ।”

 “তবে শোনো, তুমি তো জানো, আমার অত্যন্ত বেহায়া একটা ফোর্ড গাড়ি আছে। সেটার চালচলনের ঢিলেমি অসহ্য। কেবল আমি