পাতা:তিনসঙ্গী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২০
তিন সঙ্গী

আর্টিস্টের পক্ষে গলার ফাঁস। ইন্‌স্পিরেশনের দম বন্ধ করে দেয়। তোমাকে বড়ো করতে যদি পারতুম আমার যদি সে শক্তি থাকত তা হলে —”

 অভীক ঝেঁকে উঠে বললে, “পারতুম কী, পেরেছ। আমার এই দুঃখু যে আমার সেই ঐশ্বর্য তুমি চিনতে পারো নি। যদি পারতে তা হলে তোমার ধর্মকর্মের সব বাঁধন ছিঁড়ে আমার সঙ্গিনী হয়ে আমার পাশে এসে দাঁড়াতে; কোনো বাধা মানতে না। তরী তীরে এসে পৌঁছয় তবু যাত্রী তীর্থে ওঠবার ঘাট খুঁজে পায় না। আমার হয়েছে সেই দশা। বী, আমার মধুকরী, কবে তুমি আমাকে সম্পূর্ণ করে আবিষ্কার করবে বলে।”

 “যখন আমাকে তোমার আর দরকার হবে না।”

 “ও-সব অত্যন্ত ফাঁপা কথা। অনেকখানি মিথ্যের হাওয়া দিয়ে ফুলিয়ে তোলা। স্বীকার করো, ‘আমাকে না হলে নয়’ বলে জেনেই উৎকণ্ঠিত তোমার সমস্ত দেহমন। সে কি আমার কাছে লুকোবে।”

 “এ কথা বলেই বা কী হবে, লুকোবই বা কেন। মনে যাই থাক, আমি কাঙালপনা করতে চাই নে।”

 “আমি চাই, আমি কাঙাল। আমি দিনরাত বলব, আমি চাই, আমি তোমাকেই চাই।”

 “আর সেইসঙ্গে বলবে, আমি ক্রাইসলারের গাড়িও চাই।”

 “ঐ তো, ওটা তো জেলাসি। পর্বতে বহ্নিমান ধূমাৎ। মাঝে মাঝে ঘনিয়ে উঠুক ধোঁয়া জেলাসির, প্রমাণ হোক ভালোবাসার অন্তর্গূঢ় আগুন। নিবে-যাওয়া ভল্‌ক্যানো নয় তোমার মন। তাজা ভিসুভিয়স।”

 ব’লে দাঁড়িয়ে উঠে অভীক হাত তুলে বললে, “হুর্‌রে।”

 “এ কী ছেলেমানুষি করছ। এইজন্যেই বুঝি আজ সকালবেলায় এসেছিলে আগে থাকতে প্ল্যান করে?”

 “হাঁ এইজন্যেই। মানছি সে কথা। নইলে এমন মুগ্ধ কেউ কেউ