পাতা:তিনসঙ্গী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৩০
তিনসঙ্গী

আমার বেলায় তুমি মহামায়া, ভুলিয়ে রাখ; অধ্যাপকের বেলায় তুমি তারা, তরিয়ে দাও। অধ্যাপক জানেন কি, অবলা নারী মৃণালভুজে তাঁকে পারে পাঠাবার উপায় করেছে?”

 “না, জানেন না।”

 “জানলে কি এই বৈজ্ঞানিকের পৌরুষে ঘা লাগবে না।”

 “ক্ষুদ্র লোকের শ্রদ্ধার দানে মহৎ লোকের অকুষ্ঠিত অধিকার, আমি তো এই জানি। এই অধিকার দিয়ে তারা অনুগ্রহ করেন, দয়া করেন।”

 “সে কথা বুঝলুম, কিন্তু মেয়েদের গায়ের গয়না আমাদেরই আনন্দ দেবার জন্যে, আমরা যত সামান্যই হই, কারো বিলেত যাবার জন্যে নয়, তিনি যত বড়োই হোন-না। আমাদের মতো পুরুষদের দৃষ্টিকে এ তোমরা প্রথম থেকেই উৎসর্গ করে রেখেছ। এই হারখানি চুনির সঙ্গে মুক্তোর মিল করা, এ আমি একদিন তোমার গলায় দেখেছিলেম, যখন আমাদের পরিচয় ছিল অল্প। সেই প্রথম পরিচয়ের স্মৃতিতে এই হারখানি এক হয়ে মিশিয়ে আছে। ঐ হার কি একলা তোমার, ও-যে আমারও।”

 “আচ্ছা, ঐ হারটা না-হয় তুমিই নিলে।”

 “তোমার সত্তা থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হার একেবারেই যে নিরর্থক। সে যে হবে চুরি। তোমার সঙ্গে নেব ওকে সবসুদ্ধ, সেই প্রত্যাশ করেই বসে আছি। ইতিমধ্যে ঐ হার হস্তান্তর করো যদি, তবে ফাঁকি দেবে আমাকে।”

 “গয়নাগুলো মা দিয়ে গেছেন আমার ভাবী বিবাহের যৌতুক। বিবাহটা বাদ দিলে ও গয়নার কী সংজ্ঞা দেব। যাই হোক, কোনো শুভ কিংবা অশুভ লগ্নে এই কন্যাটির সালংকারা মূর্তি আশা কোরো না।”

 “অন্যত্র পাত্র স্থির হয়ে গেছে বুঝি?”

 “হয়েছে বৈতরণীর তীরে। বরঞ্চ এক কাজ করতে পারি, তুমি