পাতা:তিনসঙ্গী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৩২
তিন সঙ্গী

সম্পদ। যে দেশে তোমরা বড়ো সে দেশে আমরা ধন্য।”

 “এ দেশ সেই দেশই হোক। তোমাদের দিকে তাকিয়ে সেই কথাই ভাবি প্রাণপণে। এ প্রসঙ্গে আমার কথাটা এখন থাক্‌ অন্য একসময় হবে। অমরবাবুর সফলতায় ঈর্ষা করে এমন খুদে লোক বাংলাদেশে অনেক আছে। এ দেশের মানুষরা বড়োলোকের মড়ক। কিন্তু দোহাই তোমার, আমাকে সেই বামনদের দলে ফেলো না। শোনো, আমি কত বড়ো একটা ক্রিমিন্যাল পুণ্যকর্ম করেছি—দুর্গাপূজার চাঁদার টাকা আমার হাতে ছিল। সে টাকা দিয়ে দিয়েছি অমরবাবুর বিলেতযাত্রার ফণ্ডে। দিয়েছি কাউকে না বলে। যখন ফাঁস হবে, জীববলি খোঁজবার জন্যে মায়ের ভক্তদের বাজারে দৌড়তে হবে না। আমি নাস্তিক, আমি বুঝি সত্যকার পূজা কাকে বলে। ওরা ধর্মপ্রাণ, ওরা কী বুঝবে।”

 “এ কী কাজ করলে অভীক। তুমি যাকে বল তোমার পবিত্র নাস্তিক ধর্ম এ কাজ কি তার যোগ্য, এ যে বিশ্বাসঘাতকতা।”

 “মানি। কিন্তু আমার ধর্মের ভিত কিসে তুর্বল করে দিয়েছিল তা বলি। খুব ধুম করে পূজা দেবে বলে আমার চেলারা কোমর বেঁধেছিল। কিন্তু চাঁদার যে সামান্য টাকা উঠল সে যেমন হাস্যকর তেমন শোকাবহ। তাতে ভোগের পাঁঠাদের মধ্যে বিয়োগান্ত নাট্য জমত না, পঞ্চমাঙ্কের লাল রঙটা হত ফিকে। আমার তাতে আপত্তি ছিল না। স্থির করেছিলেম নিজেরাই কাঠি-হাতে ঢাকে ঢোলে বেতালা চাঁটি লাগবে অসহ্য উৎসাহে, আর লাউকুমড়োর বক্ষ বিদীর্ণ করব স্বহস্তে খড়গাঘাতে। নাস্তিকের পক্ষে এই যথেষ্ট, কিন্তু ধর্মপ্রাণের পক্ষে নয়। কখন সন্ধ্যাবেলায় আমাকে না জানিয়ে ওদের একজন সাজল সাধুবাবা, পাঁচজন সাজল চেলা। কোনো একজন ধনী বিধবা বুড়িকে গিয়ে বললে, তার যে-ছেলে রেঙ্গুনে কাজ করে, জগদম্বা স্বপ্ন দিয়েছেন, যথেষ্ট পাঁঠা আর পুরোবহরের পুজো না পেলে মা তাঁকে আস্ত খাবেন। তাঁর কাছ থেকে স্ক্রু ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পাঁচ হাজার টাকা বের করেছে।