পাতা:তিনসঙ্গী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
শেষ কথা
৩৯

মসলা-সংগ্রহ শিখতে হবে। ধরণী শক্তিমানদের জন্তে জমা করে রেখেছেন তার দুর্গম জঠরে কঠিন খনিজ পদার্থ, এই নিয়ে দিগ্বিজয় করেছে তারা, আর গরিবদের জন্যে রয়েছে তার উপরের স্তরে ফসল— হাড় বেরিয়েছে তাদের পাঁজরায়, চুপসে গেছে তাদের পেট। আমি লেগে গেলুম খনিজবিদ্যা শিখতে। ফোর্ড বলেছে ইংরেজ অকেজো, তার প্রমাণ হয়েছে ভারতবর্ষে— একদিন হাত লাগিয়েছিল তারা নীলের চাষে, আর-একদিন চায়ের চাষে— সিবিলিয়ানের দল দপ্তরখানায় তকমাপরা law and order-এর ব্যবস্থা করেছে, কিন্তু ভারতের বিশাল অন্তর্ভাণ্ডারের সম্পদ উদঘাটিত করতে পারে নি, কি মানবচিত্তের, কি প্রকৃতির। বসে বসে পাটের চাষীর রক্ত নিংড়েছে। জাম্‌শেদ্‌ টাটাকে সেলাম করেছি সমুদ্রের ওপার থেকে। ঠিক করেছি আমার কাজ পটকা ছোঁড়া নয়। সিঁধ কাটতে যাব পাতালপুরীর পাথরের প্রাচীরে। মায়ের আঁচলধরা বুড়ো খোকাদের দলে মিশে ‘মা মা’ ধ্বনিতে মন্তর পড়ব না, আর দেশের দরিদ্রকে অক্ষম অভুক্ত অশিক্ষিত দরিদ্র বলেই মানব, ‘দরিদ্রনারায়ণ’ বুলি দিয়ে তার নামে মন্তর বানাব না। প্রথম বয়সে এরকম বচনের পুতুলগড় খেলা অনেক খেলেছি— কবিদের কুমোরবাড়িতে স্বদেশের যে রাংতালাগানো প্রতিমা গড়া হয়, তারই সামনে বসে বসে অনেক চোখের জল ফেলেছি। কিন্তু আর নয়, এই জাগ্রত বুদ্ধির দেশে এসে বাস্তবকে বাস্তব বলে জেনেই শুকনো চোখে কোমর বেঁধে কাজ করতে শিখেছি। এবার গিয়ে বেরিয়ে পড়বে এই বিজ্ঞানী বাঙাল কোদাল নিয়ে কুডুল নিয়ে হাতুড়ি নিয়ে দেশের গুপ্তধনের তল্লাসে, এই কাজটাকে কবির গদ্‌গদ-কণ্ঠের চেলারা দেশমাতৃকার পূজা বলে চিনতেই পারবে না।

 ফোর্ডের কারখানাঘর ছেড়ে তার পরে ন বছর কাটিয়েছি খনিবিদ্যা খনিজবিদ্যা শিখতে। যুরোপের নানা কেন্দ্রে ঘুরেছি, হাতে-