পাতা:তিনসঙ্গী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৫০
তিন সঙ্গী

 দিনের আলো প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। এইবার অচিরার ঘরে ফেরবার সময়, কিংবা ওর দাদামশায় এসে ওকে বেড়াতে নিয়ে যাবেন। এমন সময়ে একজন হিন্দুস্থানী গোঁয়ার এসে অচিরার হাত থেকে হঠাৎ তার ব্যাগ আর ডায়ারিটা ছিনিয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছিল, আমি সেই মুহূর্তেই বনের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে বললুম, “কোনো ভয় নেই আপনার।”— এই বলে ছুটে সেই লোকটার ঘাড়ের উপর গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তেই সে ব্যাগ আর খাতা ফেলে দৌড় মারলে। আমি লুঠের ধন নিয়ে এসে অচিরাকে দিলুম।

 অচিরা বললে, “ভাগ্যিস আপনি—”

 আমি বললুম, “আমার কথা বলবেন না, ভাগ্যিস ও লোকটা এসেছিল।”

 “তার মানে?”

 “তার মানে, ওরই সাহায্যে আপনার সঙ্গে প্রথম কথাটা হয়ে গেল। এতদিন কিছুতেই ভেবে পাচ্ছিলুম না, কী যে বলি।”

 “কিন্তু ও যে ডাকাত।”

 “না, ও ডাকাত নয়, ও আমার বরকন্দাজ।”

 অচিরা মুখে তার খয়েরি রঙের আঁচল তুলে ধরে খিলখিল করে হেসে উঠল। কী মিষ্টি তার ধ্বনি, যেন ঝরনার স্রোতে নুড়ির সুরওয়ালা শব্দ।

 হাসি থামতেই বললে, “কিন্তু সত্যি হলে খুব মজা হত।”

 “মজা হত কার পক্ষে।”

 “যাকে নিয়ে ডাকাতি তার পক্ষে। এই রকম যে একটা গল্প পড়েছি।”

 “তার পরে উদ্ধারকর্তার কী হত।”

 “তাকে বাড়ি নিয়ে গিয়ে চা খাইয়ে দিতুম।”

 “আর এই ফাঁকি উদ্ধারকর্তার কী হবে।”

 “তার তো আর-কিছুতে দরকার নেই। সে তো আলাপ করবার