পাতা:তিনসঙ্গী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
শেষ কথা
৬১

 সেদিন এই—যে কথাবার্তা হয়ে গেল, এ নেহাত হাস্যালাপ নয়। এর মধ্যে ছিল যুদ্ধের সূচনা। অচিরার স্বভাবের দুটো দিক ছিল, আর তার ছিল দুটো আশ্রয়। এক ছিল তাদের নিজেদের বাড়ি আর ছিল সেই পঞ্চবটী। ওর সঙ্গে যখন আমার বেশ সহজ সম্বন্ধ হয়ে এসেছে, তখন স্থির করেছিলুম, ঐ পঞ্চবটীর নিভৃতে হাসিকৌতুকের ছলে আমার জীবনের সদ্যসংকটের কথা কোনো রকম করে তুলব এবং নিষ্পত্তির দিকে নিয়ে যাব। কিন্তু ওখানে পথ বন্ধ। আমাদের পরিচয়ের প্রথম দিনে প্রথম কথা যেমন মুখে আসছিল না, তেমনি এখানে যে অচিরা আছে তার কাছে প্রথম কথা নেই। মোকাবিলায় ওর চরম মনের কথায় পৌঁছবার কোনো উপায় খুঁজে পাই নে। ওর ঘরের কাছে ওর সহাস্যমুখরতা রোধ করে দেয় আমার তরফের এক পা অগ্রগতি। আর ওর নিভৃত বনচ্ছায়ায় আমার সমস্ত চাঞ্চল্য ঠেকিয়ে রেখেছে নির্বাক নিঃশব্দতায়। কোনো কোনোদিন ওদের ওখানে চায়ের নিমন্ত্রণ সভার একটা কোনো সীমানায় মন খোলবার সুযোগ পাওয়া যায়, অচিরা বুঝতে পারে আমি বিপদমণ্ডলীর কাছাকাছি আসছি, সেইদিনই ওর বাক্যবাণবর্ষণের অবিরলতা অস্বাভাবিক বেড়ে ওঠে। একটুও ফাঁক পাই নে আর আবহাওয়াও হয়ে ওঠে প্রতিকূল। আমার মন হয়েছে অত্যন্ত অশান্ত, কাজের বাধা এমনি ঘটছে যে, আমি লজ্জা পাচ্ছি মনে মনে। সদরে বাজেটের মিটিঙে আমার রিসর্চ-বিভাগে আরো কিছু টাকা মঞ্জুর করে নেবার প্রস্তাব আছে, তারই সমর্থক রিপোর্ট অর্ধেকের বেশি লেখা হয় নি। ইতিমধ্যে ক্রোচের এস্‌থেটিক্‌স্‌ সম্বন্ধে আলোচনা রোজ কিছুদিন ধরে শুনে আসছি। বিষয়টা সম্পূর্ণ আমার উপলব্ধির এবং উপভোগের বাইরে— সে কথা অচিরা নিশ্চিত জানে। দাদুকে উৎসাহিত করে আর মনে মনে হাসে। সম্প্রতি চলছে behaviourism সম্বন্ধে যত বিরুদ্ধ যুক্তি আছে, তার ব্যাখ্যা। এই তত্ত্বালোচনার শোচনীয়তা হচ্ছে এই যে,