পাতা:তিনসঙ্গী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
শেষ কথা
৬৭

হয়, তা হলে দিদিমা দি সেকেণ্ডের আমদানি করতে হবে, তোমার লাইব্রেরি বেচে তাঁর গয়না বানিয়ে দেবে, আমি দেব লম্বা দৌড়। অত্যন্ত অহংকার না বাড়লে এ কথা তোমাকে মানতেই হবে, আমাকে না হলে একদিনও তোমার চলে না। আমার অনুপস্থিতিতে পনেরোই আশ্বিনকে পনেরোই অক্টোবর বলে তোমার ধারণা হয়, যেদিন বাড়িতে তোমার সহযোগী অধ্যাপকের নিমন্তন্ন, সেইদিনই লাইব্রেরি ঘরে দরজা বন্ধ করে নিদারুণ একটা ইকোয়েশন কষতে লেগে যাও। গাড়িতে চড়ে ড্রাইভরকে যে ঠিকানা দাও, সে ঠিকানায় আজও বাড়ি তৈরি হয় নি। নবীনবাবু মনে করছেন আমি অত্যুক্তি করছি।”

 আমি বললুম, “একেবারেই না। কিছুদিন তো ওঁকে দেখছি, তার থেকেই অসন্দিগ্ধ বুঝেছি, আপনি যা বলছেন তা খাঁটি সত্য।”

 “আজ এত অলুক্ষণে কথা তোমার মুখ দিয়ে বেরুচ্ছে কেন। জানো নবীন, এই রকম যা-তা বলবার উপসর্গ ওর সম্প্রতি দেখা দিয়েছে।”

 “সব লক্ষণ শান্ত হয়ে যাবে, তুমি চলো দেখি তোমার কাজে। নাড়ী আবার ফিরে আসবে। থামবে প্রলাপ-বকুনি।”

 অধ্যাপক আমার দিকে চেয়ে বললেন, “তোমার কী পরামর্শ নবীন।”

 উনি পণ্ডিত মানুষ বলেই জিয়লজিস্টের বুদ্ধির ’পরে ওঁর এত শ্রদ্ধা। আমি একটুক্ষণ স্তব্ধ থেকে বললুম, “অচিরা দেবীর চেয়ে সত্য পরামর্শ আপনাকে কেউ দিতে পারবে না।”

 অচিরা উঠে দাঁড়িয়ে পা ছুঁয়ে আমাকে প্রণাম করলে। আমি সংকুচিত হয়ে পিছু হঠে গেলুম। অচিরা বললে, “সংকোচ করবেন না, আপনার তুলনায় আমি কেউ নই। সে কথাটা একদিন স্পষ্ট হবে। এইখানেই শেষ বিদায় নিলুম। যাবার আগে আর কিন্তু দেখা হবে না।”

 অধ্যাপক আশ্চর্য হয়ে বললেন, “সে কী কথা দিদি।”

 “দাদু, তুমি অনেক কিছু জানো, কিন্তু অনেক কিছু সম্বন্ধে