“কাল সকালে আমার ছুটি আছে, যাব।”
“তোমার দেখছি গাছপালার শখ। বড়ো আনন্দ হল। গাছপালার খোঁজে আমার স্বামী গিয়েছিলেন বর্মায়, আমি তাঁর সঙ্গ ছাড়ি নি।”
সঙ্গ ছাড়ে নি কিন্তু সায়ান্সের চর্চায় নয়। নিজের ভিতর থেকে যে গাদ উঠত ফুটে, স্বামীর চরিত্রের মধ্যেও সেটা অনুমান না করে থাকতে পারত না। সন্দেহের সংস্কার ছিল ওর আঁতে আঁতে। এক সময়ে নন্দকিশোরের যখন গুরুতর পীড়া হয়েছিল তিনি স্ত্রীকে বলেছিলেন, “মরবার একমাত্র আরাম এই যে, সেখান থেকে তুমি আমাকে খুঁজে বের করে ফিরিয়ে আনতে পারবে না।”
সোহিনী বললে, “সঙ্গে যেতে পারি তো।”
নন্দকিশোর হেসে বললেন, “সর্বনাশ!”
সোহিনী রেবতীকে বললে, “বর্মা থেকে আসবার সময় এনেছিলুম এক গাছের চারা। বর্মিজরা তাকে বলে ক্কোযাইটানিয়েঙ্গ্। চমৎকার ফুলের শোভা— কিন্তু কিছুতেই বাঁচাতে পারলুম না।”
আজই সকালে স্বামীর লাইব্রেরি ঘেঁটে এ নাম সোহিনী প্রথম বের করেছে। গাছটা চোখেও দেখে নি। বিদ্যার জাল ফেলে বিদ্বানকে টানতে চায়।
অবাক হল রেবতী। জিগ্গেসা করলে, “এর লাটিন নামটা কি জানেন।”
সোহিনী অনায়াসে বলে দিলে, “তাকে বলে মিলেটিয়া।”
বললে, “আমার স্বামী সহজে কিছু মানতেন না, তবু তাঁর একটা অন্ধবিশ্বাস ছিল ফলে ফুলে প্রকৃতির মধ্যে যা-কিছু আছে সুন্দর, মেয়েরা বিশেষ অবস্থায় তার দিকে একান্ত করে যদি মন রাখে তা হলে সন্তানরা মুন্দর হয়ে জন্মাবেই। এ কথা তুমি বিশ্বাস করো কি।”
বলা বাহুল্য এটা নন্দকিশোরের মত নয়।
রেবতী মাথা চুলকিয়ে বললে, “যথোচিত প্রমাণ তো এখনো জড়ো হয় নি।”