পাতা:তিনসঙ্গী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৯২
তিন সঙ্গী

স্বামীর আইনে বারণ। তিনি বলতেন, মানুষ তো অজগরের জাত নয়।”

 একটা বড়ো টিফিন ক্যারিয়ারে থাকে থাকে সোহিনী খাবার সাজিয়ে দিলে। নীলাকে বললে, “দে তো মা, সাজিতে ফুলগুলি ভালো করে সাজিয়ে। এক জাতের সঙ্গে আর-এক জাত মিশিয়ে দিস নে যেন। আর তোর খোঁপা ঘিরে ঐ যে সিল্কের রুমাল জড়িয়েছিস, ওটা পেতে দিস ফুলগুলির উপরে।”

 বিজ্ঞানীর চোখে আর্টপিপাসুর দৃষ্টি উঠল উৎসুক হয়ে। এ যে প্রাকৃত জগতের মাপ-ওজনের বাইরেকার জিনিস। নানা রঙের ফুলগুলির মধ্যে নীলার সুঠাম আঙুল সাজাবার লয় রেখে নানা ভঙ্গিতে চলছিল— রেবতীর চোখ ফেরানো দায় হল। মাঝে মাঝে নীলার মুখের দিকে তাকিয়ে নিচ্ছিল। একদিকে সেই মুখের সীমানা দিয়েছে চুনি-মুক্তো-পান্নার-মিশোল-করা একহার হার জড়ানো চুলের ইন্দ্রধনু, আর একদিকে বসন্তীরঙা কাঁচুলির উচ্ছিত রাঙা পাড়টি। সোহিনী মিষ্টান্ন সাজাচ্ছিল কিন্তু ওর একটা তৃতীয় নেত্র আছে যেন। সামনে যে একটা জাদু চলছিল সে ওর লক্ষ এড়ায় নি।

 নিজের স্বামীর অভিজ্ঞতা অনুসারে সোহিনীর ধারণা ছিল বিদ্যা-সাধনার বেড়াদেওয়া খেত যে-সে গোরুর চরবার খেত নয়। আজ আভাস পেল বেড়া সকলের পক্ষে সমান ঘন নয়। সেটা ভালো লাগল না।


পরের দিন সোহিনী অধ্যাপককে ডেকে পাঠালে। বললে, “নিজের গরজে আপনাকে ডেকে এনে মিছিমিছি কষ্ট দিই। হয়তো কাজের ক্ষতিও করি।”

 “দোহাই তোমার, আরো-একটু ঘন ঘন ডেকো। দরকার থাকে