পাতা:ত্রিপুরার স্মৃতি.djvu/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 রাজা ভবচন্দ্র উল্লিখিত স্তৃপদ্বয়ের একটীতে অবস্থিত নিকেতনে উপবেশনপূর্ব্বক অপর স্তূপোপরি নির্মিত ভবনে হুকা স্থাপন করিয়া ধূমপান কবিতেনএইরূপ কৌতুকোদ্দীপক প্রবাদ জনসমাজে প্রচলিত আছে। এতদ্ব্যতীত তাহার অদ্ভূত প্রকৃতির সম্বন্ধে আরও নানাবিধ হাস্যজনক কাহিনী শ্রুতিগোচর হয়।

 জনশ্রুতি এই—এলাহাবাদ জিলার অন্তর্গত সুপ্রাচীন জনপদ ঝুসীতে “হরবং” নামক জনৈক বাতিকগ্রস্ত রাজা একদা রাজত্ব করিতেন। সেই সময় তদীয় আদেশানুসারে রাজ্য-মধ্যে সমস্ত দ্রব্য এক পরিমাণে ও একমূল্যে বিক্রয় হইত বলিয়া যে প্রবাদ প্রসিদ্ধ, রাজা ভবচন্দ্রের সম্বন্ধে প্রচলিত প্রবাদ-নিচয়ের দুই একটীতে-ও ঠিক সেইরূপ কথা উল্লেখ আছে।

 কি কারণে সুদূরস্থ দুইটী প্রদেশের দুই ব্যক্তির সম্বন্ধে এবংবিধ প্রবাদেব সমতা পরিলক্ষিত হয়, তাহার কারণ উপলব্ধ হয না—বরঞ্চ প্রহেলিকাব ন্যায়ই অনুভূত হয়। রাজা ভবচন্দ্রেব সম্বন্ধে যে সকল প্রবাদ প্রচলিত আছে, তৎসমুদয়-ই কি কল্পনা-প্রসূত, অথবা তাহাতে কোনরূপ সত্যের অংশ আছে ইহা নির্ণয় করা দুষ্কর।

 ‘ভচনমুড়া’ বা ‘ভজনমুড়া’ “নামক ইষ্টক-স্তূপ—এবং আর যে একটি স্তূপের বিষয় পূর্ব্বে উল্লিখিত হইয়াছে, তাহা যে প্রাচীনকালে নির্ম্মিত কোন বৌদ্ধ স্তূপের ধ্বংসাবশেষ নহে, ইহা কে বলিতে পারে? অত্রস্থ বিকীর্ণ ইষ্টক-রাশি—অধুনা যাহা রাজা ভবচন্দ্রের নিকেতনাদির বিধ্বস্ত অংশ বলিয়া জনসাধাবণ কর্ত্তৃক কথিত হয়, তৎসমুদয় কোন বৌদ্ধধর্ম্মাবলম্বী নৃপাল কর্ত্তৃক নির্ম্মিত বৌদ্ধ-বিহার ও নিকেতনাদির বিধ্বস্ত অংশ হওয়া অসম্ভব নহে।

 এই প্রবন্ধ এবং ইহার পূর্ব্ববর্তী প্রবন্ধ-নিচয় পর্য্যালোচনা করিলে ইহা সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয় যে, কুমিল্লার দক্ষিণ ও পশ্চিমপ্রান্তবর্তী অঞ্চলসমূহ পূর্ব্বকালে নানা বংশ-সম্ভূত নৃপালগণের শাসনাধীনে ছিল। সম্ভবতঃ তাঁহাদিগের মধ্যে কেহ কেহ হিন্দুধর্ম্মাবলম্বী এবং কেহ বা বৌদ্ধধর্ম্মাবলম্বী ছিলেন,—কালপ্রবাহে তাঁহাদিগের প্রকৃত ইতিবৃত্ত ঘোর তিমিরে নিহিত হইয়া অধুনা কেবল জনশ্রুতিতে পরিণত হইয়াছে।

 ন্যূনাতিরেক পঞ্চাশৎবর্ষ অতীত হইল বীরমণি হাজারী নামক জনৈক ত্রিপুররাজ কর্ম্মচারী চৌদ্দগ্রাম পরগণার পূর্ব্বদিকস্থ খণ্ডল পরগণায় একটী পুষ্করিণী খনন করাইবার কালে মৃত্তিকার গর্ভ হইতে একখানি প্রস্তর-নির্ম্মিত শিব-শক্তির

২০
ত্রিপুরার স্মৃতি