পাতা:ত্রিপুরার স্মৃতি.djvu/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সুজামস্‌জিদ্‌

 কুমিল্লা নগরীর অন্তঃপাতী সুজাগঞ্জ নামক পল্লীতে অবস্থিত উক্ত সুপ্রসিদ্ধ মসজিদটী ঘটনা বিশেষের স্মৃতিচিহ্ন স্বরূপ ত্রিপুরাধিপতি গোবিন্দ মাণিক্য-কর্ত্তৃক খৃষ্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীতে নির্ম্মিত হইয়াছিল। যে ঘটনামূলে তিনি ইহা নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, এই বিষয় যথাসম্ভব সংক্ষেপে নিম্নে বর্ণিত হইল।

 মোগল সম্রাট শাহজাহানকে তদীয় পুত্র ঔরঙ্গজেব কারারুদ্ধ করিয়া ভারত সাম্রাজ্য অধিকার করিতে প্রয়াস প্রাপ্ত হইলে, রাজ্যাধিকারের জন্য শাহজাহানের পুত্রগণ-মধ্যে যুদ্ধ আরম্ভ হয়। সেই সংগ্রামে সুবে-বাঙ্গলা, বিহার ও উড়িষ্যার শাসন কর্ত্তা শাহজাদা সুলতান মহম্মদ সুজা ঔরঙ্গজেবের কর্ত্তৃক পরাজিত হইলে তদীয় ভ্রাতা দারামুরাদ্‌ বখ্‌শের ন্যায় নিহত হওয়ার আশঙ্কায় তদানীন্তন ত্রিপুরাধিপতির আশ্রয় গ্রহণ পূর্ব্বক জীবনরক্ষার উদ্দেশে ত্রিপুরাতে আগমণ করেন।

 হতভাগ্য সুজা তথায় উপস্থিত হইয়া পরম্পরায় লোকমুখে জ্ঞাত হন যে, তাঁহাকে ধৃত করিবার জন্য ঔরঙ্গজেব্‌ গোবিন্দ মাণিক্যকে সানুনয়ে এক লিপি প্রেরণ করিয়াছেন, এবং সেই লিপি তৎকালের ত্রিপুর-রাজ্যাধিকারী ছত্র মাণিক্যের হস্তগত হইয়াছে। তখন প্রাণ ভয়ে তিনি ত্রিপুরা হইতে পলায়ণ পূর্ব্বক রাজ্যচ্যূত গোবিন্দ মাণিক্যের সমীপে উপস্থিত হইয়া তদীয় আশ্রয় প্রার্থী হন। যে সুজা একদা গোবিন্দ মাণিক্যের বিরুদ্ধাচরণ করিতে কুণ্ঠিত হন নাই, কালের কুটিলচক্রে সেই সুজাই আজ জীবনরক্ষার্থে গোবিন্দ মাণিক্যের শরণাপন্ন হইতে বাধ্য হইয়াছিল—ইহাকেই বলে বিধিবিড়ম্বনা।

 বর্ণিত ঘটনার সময় (১৭৭০ ত্রিপুরাব্দ) গোবিন্দ মাণিক্য তাঁহার বৈমাত্রেয় ভ্রাতা ছত্র মাণিক্যের চক্রান্তে রাজ্যভ্রষ্ট হইয়া চট্টগ্রামের পার্ব্বত্য প্রদেশে বাস করিতেছিলেন। তথায় তিনি সুজাকে আশ্রয় প্রদান পূর্ব্বক “রসাঙ্গ” বা আরাকান প্রদেশে গমন করেন। ইহার কিয়দ্দিবস পর সুজাও গোবিন্দ মানিক্যের অনুবর্ত্তী হন।

৩০
ত্রিপুরার স্মৃতি