পাতা:ত্রিপুরার স্মৃতি.djvu/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করিতে পারি এমন কোন দ্রব্য এক্ষণে আমার নিকট নাই, অতএব আপনার অনুপযুক্ত হইলেও কৃতজ্ঞতার চিহ্নস্বরূপ ইহাই আমি আপনাকে উপঢৌকন প্রদান করিতেছি, অনুগ্রহ পুর্ব্বক এই যৎসামান্য দ্রব্যদ্বয় গ্রহণ করিয়া বাধিত করিবেন।”

 যে অসিটী সুজা-কর্ত্তৃক গোবিন্দ মাণিক্যকে প্রদত্ত হইয়াছিল, তাহা অদ্যাপি ত্রিপুরাধিপতিগণের নিকট বর্ত্তমান আছে।

 শাহজাদা সুজা ও গোবিন্দ মাণিক্য উভয়েই এক সময়ে এবং এক-ই বিষয়ে জন্মভূমি হইতে বিতাড়িত হন। সুজার পক্ষে দিল্লীর সিংহাসন লাভ করা দূরের কথা—তাঁহার আর স্বদেশে প্রত্যাবর্ত্তন করা ভাগ্যে ঘটে নাই; আরাকানেই তিনি নিহত হন। কিন্তু ধর্ম্মপরায়ণ হিন্দু নৃপতি গোবিন্দ মাণিক্য পুণ্যবলে পুনরায় রাজ্যপ্রাপ্ত হইয়াছিলেন।

 ত্রিপুরাধিপতি গোবিন্দ মাণিক্য ১০৭৬ ত্রিপুরাব্দে (১৬৬৬ খৃষ্টাব্দ) পুনরায় রাজদণ্ড ধারণ করিলে বিবৃত ঘটনার স্মৃতিচিহ্ন-স্বরূপ কুমিল্লা নগরীর উত্তর প্রান্তে প্রবাহিত গোমতী নদীর তীববর্ত্তী “সুজামস্‌জিদ্‌” নামক শাহজাদা সুলতান মহম্মদ সুজার নামসমন্বিত মুসলমানগণেব সুপ্রসিদ্ধ ভজনালয়টী নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন। এবং যে ভূমিখণ্ডের উপর বর্ণিয়মান মস্‌জিদটী নির্ম্মিত, তৎ-কর্ত্তৃক তাহাতে সুজার নামানুসারে একটী গঞ্জ স্থাপিত হইয়া সুজাগঞ্জ অ্যাখ্যা প্রদত্ত হইয়াছিল।

“গোমতী নদীর কুলে মজিদ স্থাপিয়া।
সুজা বাদসার নামে মজিদ করিয়া॥
সুজা নামে এক গঞ্জ রাজা বসাইল।
সুজাগঞ্জ নাম বলি তাহার রাখিল॥”

রাজমালা—গোবিন্দ মাণিক্য খণ্ড

 ঐতিহাসিক ঘটনা জড়িত যে সমুদয় কীর্ত্তিমালা এতদঞ্চলে অবস্থিত তন্মধ্যে ইহা অন্যতম। বর্ণিত মসজিদ নির্ম্মিত হওয়ার পব অবধি এযাবৎ ইহার রক্ষণাবেক্ষণ প্রভৃতি সমস্ত কার্য্যই ত্রিপুররাজ্য হইতে সম্পাদিত হইতেছে।

 সুজাকে ধৃত করিবার জন্য ঔরঙ্গজেব কর্ত্তৃক গোবিন্দ মাণিক্যের নিকট যে এক লিপি প্রেরিত হইয়াছিল বলিয়া পূর্ব্বে কথিত হইয়াছে, সেই পত্রের প্রতিলিপি এবং তাহার বঙ্গানুবাদ এই পুস্তকের পরিশিষ্টে প্রদত্ত হইল।


৩২
ত্রিপুরার স্মৃতি