পাতা:ত্রিপুরার স্মৃতি.djvu/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



সতররত্ন বা সপ্তদশ-রত্ন

 কুমিল্লা নগরীর পূর্বপ্রান্তবর্ত্তী জগন্নাথপুর গ্রামমধ্যে “সতররত্ন” নামক সুপ্রসিদ্ধ যে ভগ্নমন্দির অবস্থিত, এতৎপ্রদেশস্থ প্রাচীন কীর্ত্তিমালার মধ্যে তাহার তুল্য স্বদ্বগু স্থপতিকার্য্যের আদর্শ একটও নাই বলিলে অত্যুক্তি হয় না। এতদঞ্চলে উক্ত মন্দির একটী অদ্বিতীয় কীর্ত্তি-চিহ্ন বলিয়। সর্ব্বসাধারণ-কর্তৃক বিবেচিত হয়।

 কথিত আছে খৃষ্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীর (১০৯২ ত্রিপুরাব্দ) শেষ ভাগের ত্রিপুরাধিপতি দ্বিতীয় রত্ন মাণিক্য উল্লিখিত মন্দিরের ভিত্তি স্থাপন করিয়াছিলেন। কিন্তু ইহার কিয়দ্দিবস পরই তিনি পরলোকে গমন করাতে তদীয় আরব্ধ মন্দিরটীর নির্ম্মাণ কার্য্য স্থগিত হয়, এবং তৎপরবর্তী কতিপয় ত্রিপুরেশের রাজত্ব কাল পর্য্যন্ত ইহার কার্য্যে আর হস্তার্পণ হয় নাই। এই বিষয় কেবল “ত্রিপুর বংশাবলী” নামক গ্রন্থে উল্লেখ আছে; কৃষ্ণমালা প্রভৃতি অপরাপর ত্রিপুররাজবংশ চরিত গ্রন্থে দৃষ্ট হয় না।

 খৃষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর (১১৭০ ত্রিপুরাব্দ) খ্যাতনামা ধর্ম্মনিষ্ঠ ত্রিপুরাধিপতি কৃষ্ণ মাণিক্য সিংহাসন অধিরোহণ করিয়া মন্দিরটীর পুন নির্ম্মাণ আরম্ভ করেন, এবং ইহার প্রস্তুত কার্য্য সমাপনান্তে ১১৮৮ ত্রিপুরাব্দে তন্মধ্যে জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার দারুমূর্ত্তি স্থাপন পূর্ব্বক উক্ত মন্দির সসমারোহে প্রতিষ্ঠা করেন।

 সচরাচর যে রূপ জগন্নাথ মূর্ত্তি পরিলক্ষিত হয় উক্ত-মূর্ত্তিত্রয় তদ্রূপ নহে। মূর্ত্তি-নিচয়ের কর—অঙ্গুলী বিশিষ্ট। এই কারণে ভ্রমবশতঃ উক্ত ত্রিমূর্ত্তিকে রাম, লক্ষ্মণ, সীতার প্রতিমূর্ত্তি বলিয়া পূজারিগণ-কর্ত্তৃক কথিত হয়।

 ত্রিপুরেশ কৃষ্ণ মাণিক্যের জীবন চরিত “কৃষ্ণমালা” নামক বঙ্গভাষায় লিখিত গ্রন্থ হইতে অবগত হওয়া যায়—উল্লিখিত ব্যাপার উপলক্ষে নানা দিগ্‌দেশ হইতে ব্রাহ্মণ পণ্ডিত প্রভৃতি বহুলোক আহূত হইয়াছিল। এবং তৎকালে তুলাপুরুষ, পঞ্চাগ্নি, দানসাগর প্রভৃতি বহুবিধ-পুণ্যকার্য্যও ত্রিপুরেশ কৃষ্ণ মাণিক্য-কর্ত্তৃক সংসাধিত হইয়াছিল। এই বিষয় কৃষ্ণমালায় এবংবিধ বর্ণিত আছে।—

সপ্তদশ শত সংখ্য শকের সময়।
চৈত্র মাসে প্রতিষ্ঠা করিল দেবালয়॥

ত্রিপুরার স্মৃতি
৩৩
 ত্রিপুরার স্মৃতি—৩