পাতা:ত্রিপুরার স্মৃতি.djvu/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 মন্দিরটীর চূড়াগাত্রে প্রোথিত কতিপয় শ্রেণীবদ্ধ লৌহকীলক দৃষ্টি গোচর হয়। তৎসম্বন্ধে এইরূপ কথিত আছে—একদা রজনী যোগে জনৈক তস্কর উক্ত লৌহকীলক নিচয় মন্দির গাত্রে প্রোথিত করিয়া তাহার সাহায্যে মন্দির চূড়াতে আরোহণ পূর্ব্বক তত্রস্থ সুবর্ণপত্র মণ্ডিত কুম্ভ অপহরণ করিতে চেষ্টা করিয়াছিল। কিন্তু ঐ ব্যক্তি অকস্মাৎ কোনরূপ ভয় প্রাপ্ত হওয়াতে কীলক হইতে তাহার পদস্খলন হয়, এবং ভূমিতে পতিত হইয়া সেই স্থানেই তাহার ভবলীলা সাঙ্গ হয়। ঐ তস্কবের ভূলুষ্ঠিত দেহ এবংবিধ ছিন্ন ভিন্ন হইয়াছিল যে, কেহই তাহাকে চিনিতে সক্ষম হয় নাই। আবাব কেহ কেহ এইরূপও কহে—যে ব্যক্তি উক্ত মন্দির নির্ম্মাণ করিয়াছিল, সেই ব্যক্তি চূড়াতে সংস্থাপিত কুম্ভ অপহবণ করিবার উদ্দেশ্যে মন্দির নির্ম্মাণ কালে তদ্গাত্রে লৌহকীলক নিচয় প্রোথিত করিয়াছিল। প্রকৃতপক্ষে উক্ত সুউচ্চ মন্দিব চূড়াতে কুম্ভ স্থাপন সুবিধার জন্যই লৌহকীলক নিচয প্রোথিত হইয়াছিল কিনা ইহাই বা কে বলিতে পারে।

 “সতররত্ন” নামে খ্যাত উক্ত ভগ্ন মন্দিবের দক্ষিণদিকে অবস্থিত যে একটী মন্দিরমধ্যে অধুনা জগন্নাথ প্রভৃতি দেবমূর্ত্তি প্রতিষ্ঠিত আছে, তাহা স্বনামধন্য চন্দ্রবংশাবতংস ত্রিপুরেশ বীরচন্দ্র মাণিক্যের জননী পতিপরায়ণা সুলক্ষণা দেবী কর্ত্তৃক নির্ম্মিত। এই বিষয়ে এবংবিধ প্রবাদ শ্রুতিগোচর হয়:—

 প্রাগুক্ত ঘটনা অনুসারে সতররত্ন মন্দির-মূলে জনৈক তস্করের অপঘাত হওয়া বশতঃ মন্দিরটী কলুষিত হওয়াতে, দেবমূর্ত্তি তথা হইতে স্থানান্তর কবিবাব জন্য ত্রিপুরাধিপতি কৃষ্ণকিশোর মাণিক্যের মহিষী সুলক্ষণা দেবী জগন্নাথ-কর্ত্তৃক স্বপ্নে আদিষ্ট হন। তদনুসারে তিনি বর্ত্তমান মন্দির নির্মাণ পূর্ব্বক সতররত্ন হইতে জগন্নাথ প্রভৃতি দেবমূর্ত্তি-নিচয় আনয়ন করিয়া সসমারোহে নবনির্ম্মিত মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত করেন। উক্ত মন্দির-গাত্রে সংলগ্ন শিলালিপির প্রতিলিপি:

“যঃ শ্রীকৃষ্ণকিশোরভূপতিলকো মাণিক্যবিখ্যাতকঃ,
সঞ্চাতোহবনিমণ্ডলে শশিকুলে রাজাধিরাজো মহান্‌।
পত্নী তস্য সুলক্ষণা সুবিদিতা সাধ্বী গুণৈকালয়া।
প্রাসাদঃ পরিনির্ম্মিতঃ খলু তয়া শ্রীকৃষ্ণসন্তুষ্টয়ে॥
শাকে বৈরিমৃগাঙ্কমৌলিজলধিক্ষৌণী প্রমাণে পতে
ঘস্রে ভৌমিসুতে রবে মিথুনগে পুষ্পেষুরিপ্বংশকে।

৩৬
ত্রিপুরার স্মৃতি