পাতা:ত্রিপুরার স্মৃতি.djvu/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 “রেসিয়ার খাগরা” নামে প্রসিদ্ধ যে সকল প্রাচীন যুদ্ধ-সঙ্গীত ত্রিপুরার পর্ব্বতনিবাসিগণ-মধ্যে প্রচলিত আছে, তন্মধ্যে উল্লিখিত পতিবিরহিণী নববধূকর্ত্তৃক গীত এই-রূপে রচিত একটী দুঃখময় বিরহ-সঙ্গীত আছে। গানটীর কথা —বিশেষতঃ সুর, আমার নিকট এমন মর্ম্মস্পর্শী বোধ হয় যে, এই জন্য তাহার যে অংশ সম্প্রতি আমার স্মরণ আছে, উহা—স্বরলিপি ও বঙ্গানুবাদ সহ পুস্তকের শেষভাগে প্রদত্ত হইল।

 নৃপাল হরিরায় বা ডাঙ্গরফার সহিত রিয়াংগণের যে মহাসমর সংঘটিত হইয়াছিল, তাহাই হওয়া সম্ভব। কিন্তু দুঃখের বিষয়-উক্ত বিজিত নৃপতি কিংবা বিজেতা ত্রিপুরেশের দাঙ্গাই ব্যতীত সঠিক নাম বলিতে কেহই সক্ষম নহে।

 খৃষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে “গোপীপ্রসাদ সুবা” ত্রিপুরাধিপতি অনন্ত মাণিক্যের প্রাণবিনাশ করিয়া “উদয় মাণিক্য” নামধারণ পূর্ব্বক রাজসিংহাসন আরোহণ করেন। সেই সময় তাঁহার দ্বারা এই সুপ্রাচীন রাজধানীর “রাঙ্গামাটি” নাম পরিবর্ত্তিত হইয়া তদীয় নামানুসারে “উদয়পুর” অ্যাখ্যা প্রদত্ত হয়। তৎকাল অবধি এ যাবৎ উক্ত জনপদ সর্ব্বসাধারণ-কর্ত্তৃক ঐ নামেই অভিহিত হইতেছে।

“রাঙ্গামাটি নাম রাজ্য পূর্ব্বাবধি ছিল।
উদয় মাণিক্যাবধি উদয়পুর হৈল॥”

     রাজমালা—উদয় মাণিক্য খণ্ড

 খৃষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে উল্লিখিত রাজধানীর সমীপবর্ত্তী জনপদনিচয়ে নানাবিধ রাষ্ট্রবিপ্লব সংঘটিত হওয়াতে তদানীন্তন ত্রিপুরেশ “কৃষ্ণ মাণিক্য” তাঁহার পূর্বপুরুষগণের রাজধানী বর্ণিত “উদয়পুর” পরিত্যাগ করিয়া বর্ত্তমান পুরাতন আগরতলাতে আগমন-পূর্ব্বক রাজধানী স্থাপিত করেন।

“এগারশ সত্তর সন হয়েত যখন।
আগরতলা রাজধানী করিল রঞ্জন॥”

     রাজমালা—কৃষ্ণ মাণিক্য খণ্ড

 “উদয়পুর” নামে সুপ্রসিদ্ধ ত্রিপুররাজ্যের এই প্রাচীন রাজধানী পূর্ব্বকালের ত্রিপুরেশগণ-কর্ত্তৃক প্রতিষ্ঠিত বহু দেবমন্দির ও রাজনিকেতনাদির ভগ্নাবশেষ এবং জলাশয়, রাজবর্ত্ম প্রভৃতি পুরাতন কীর্ত্তিমালায় পরিপূর্ণ। তৎসমুদয়-মধ্যে কতিপয় সুপ্রসিদ্ধ প্রাচীন কীর্ত্তির বিষয় নিম্নে বিবৃত হইল।

৪২
ত্রিপুরার স্মৃতি