পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/১৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সেই করাতের মত কর্ত্তনশীল “বরখ” দন্ত দ্বারা চিবাইয়া খাইলেন।

 কঙ্কাবতীর মা যখন কঙ্কাবতীকে খেতুর মার হাতে সঁপিয়া দিয়া বলিলেন, — “দিদি! এই নাও, তোমার কঙ্কাবতী নাও” তখন দুই জনের আহ্লাদ রাখিতে পৃথিবীতে কি আর স্থান হইল? মনের আনন্দে তখন খেতুর মা কি পুত্র ও পুত্রবধূকে বরণ করিয়া ঘরে লন নাই? বরণের সময় লজ্জায় খেতু কি ঘাড় হেঁট করিয়াছিলেন না? কালবৌয়ের মত কঙ্কাবতীর কি তখন একহাত ঘোমটা ছিল না? তা দেখিয়া পাড়ার একটি শিশু ছেলে কি সেই ঘোমটার ভিতর মুখ দিয়া টুঃ দেয় নাই? এসব কথার আর উত্তর দিবার আবশ্যক নাই।

 যে সময় বরণ হইতেছিল, সেই সময় রামহরির স্ত্রী খেতুর বৌ-দিদি কি করিয়াছিলেন, তা জানেন? অতি উত্তম করিয়া খেতুর কানটি তিনি মলিয়া দিয়াছিলেন।

 কান-মলা খাইয়া খেতু কি বলিলেন, তা জানেন? খেতু বলিলেন,— “যাও বৌ-দিদি, ছি!"

 পাড়ার স্ত্রীগণ তখন কি করিবেন, তা শুনিয়াছেন? কমলের স্ত্রী ঠান্‌দিদি বলিলেন,— “শালা ‘বরখ' খায়! ও সীতার মা, ওলো, শালার কান দুইটা একেবারে ছিড়িয়া দে!"

 তাহার পর কি হইল? তাহার পর খেতুর অনেক টাকা হইল। সকলে সুখ-স্বচ্ছন্দে ঘরকন্না করিতে লাগিলেন। খেতুর অনেকগুলি ছেলেপিলে হইল। তনু রায় তাহাদিগের সহিত খেলা করিতে ভালোবাসিতেন। পাড়ার বালক-বালিকারা তাঁর দৌহিত্রদিগকে মারিলে তাহাদের ঠাকুরমার সহিত তনু রায় হাত নাড়িয়া নাড়িয়া ঝগড়া করিতেন।

 তাহার পর? বার বার “তাহার পর তাহার পর” করিলে চলিবে না। দেখিতে দেখিতে পুস্তকখানি বৃহৎ হইয়া পড়িয়াছে। ইহার মূল্য দেয় কে? তাহার ঠিক নাই, কাজেই তাড়াতাড়ি শেষ করিতে বাধ্য হইলাম।

 তাহার পর কি হইল? তাহার পর আমার গল্পটি ফুরাইল। নোটে গাছটির কপালে যাহা লেখা ছিল, তাহাই ঘটিল! সেই ঘটনা লইয়া কত অভিযোগ উপস্থিত।

কঙ্কাবতী
১৩১