পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/১৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কি। আমি ভূতের রোজা নাই। ভূতের উপর আমার কিছুমাত্র অধিকার নাই। যদি থাকিত, তাহা হইলে এতক্ষণ কোনকালে আপনার স্ত্রীকে আনিয়া দিতাম। তবে আপনাকে সন্ধান বলিয়া দিলাম। আপনি এক্ষণে একটি ভাল রোজার অনুসন্ধান করুন। ভাল রোজা পাইলে নিশ্চয় আপনার স্ত্রীকে ভূতের হাত হইতে উদ্ধার করিতে পরিবেন।” এইরূপে আশ্বাস পাইয়া আমীরের মন কথঞ্চিৎ সুস্থ হইল। তাঁহার স্ত্রী যে কোনও দুষ্ট লম্পটের কুহকে পড়িয়া ঘর হইতে বাহির হয় নাই, এ দুঃখের সময় তাহাও শান্তির কারণ হইল। এখন রোজা চাই। কিন্তু ইংরেজের প্রভাবে আমাদের সকল ব্যবসাই একরূপ লোপ পাইয়াছে। অন্য ব্যবসার কথা দূরে থাকুক, ভূতাদিগের ভূতে পাওয়া ব্যবসাটি পৰ্যন্ত লোপ হইয়া গিয়াছে। এই হতভাগা দেশের লোকগুলা এমনই ইংরেজিভাবাপন্ন হইয়াছে যে, কাহাকেও ভূতে পাইলে কি ডাইনে খাইলে, বলে কিনা হিষ্টিরিয়া হইয়াছে! এ কথায় রক্তমাংসের শরীরে রাগ হয়, ভূতদেহে তা’ রাগ হইবেই। তাই ঘূণায় ভূতকুল একবাক্য হইয়া বলিল,-“দূর হউক, আর কাহাকেও পাইব না।” ডাইনীকুল একবাক্য হইয়া বলিল,-“দূর হউক, আর কাহাকেও খাইব না।” ভারতের ভূতকুল ও ডাইনীকুল আজ তাই মৌনী ও মিয়মাণ।। শ্মশান-মশান আজ তাই নীরব! রাত্রি দুই প্ৰহরের সময়, জনশূন্য মাঠের মাঝখানে, আকাশপানে পা তুলিয়া জিহবা লক-লক করিয়া, চারিদিকে ঘুরিয়া-ঘুরিয়া সেকালে ডাইনীরা যে চাতর করিত, আজ আর সে চাতর নাই। মরি! মরি! ভারতের সকল গৌরবই একে একে লোপ হইল! এ অবস্থায় আর রোজার ব্যবসা কি করিয়া চলিবে? তাহাও একপ্রকার লোপ হইয়াছে। নানা স্থানে কত শত গঙ্গা ময়রার ঘরে অন্ন নাই। পায়ের উপর পা দিয়া, সোনাদানা পরিয়া, যাহারা সুখে-স্বচ্ছন্দে কাল , আজ তাহারা পথের ভিখারী। আমীর দেখিলেন, ভাল রোজা পাওয়া বড় সহজ কািঞ্ছনীয়। আমীর কিন্তু হতাশ হইবার ছেলে ছিলেন না । মনে করিলেন যে, “যদি উলট-পালট করিয়া ফেলিতে হয়, তাহাও আমি করিব, যেখানে পাই সেইখান ভাল রোজা নিশ্চয় বাহির করিব।” এই বলিয়া তিনি পুনরায় দেশপৰ্যটনে প্ৰবৃত্ত হইলেন।” যেখানে যান, সেইখানেই সকলকে জিজ্ঞাসা করেন,- “হাঁ গা! তোমাদের এখানে ভাল ভূতের রোজা আছে?” ছােটখাট অনেক রোজার সঙ্গে দেখাও হইল। অনেক মুসলমান আসিল, যাহারা তাবিজ লিখিয়া ভূত-প্ৰেত্য-দানা-দৈত্যকে দূর করেন, তাহাদেরও সহিত সাক্ষাৎ হইল। কিন্তু মনের মত কাহাকেও পাইলেন না; বুক ফুটিয়া কেহই বলিতে পারিল না যে,-“ভূত মারিয়া আমি তোমার স্ত্রীকে আনিয়া দিব।” অবশেষে অনেক পথ, অনেক দূর যাইয়া আমীর একটি গ্রামে গিয়া পৌঁছিলেন। সেই গ্রামে প্রথমেই একটি বৃদ্ধার সহিত তাহার সাক্ষাৎ হইল। আমীর যথারীতি তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, —“হা গা! তােমাদের এখানে ভাল রোজা আছে?” বৃদ্ধা উত্তর করিল,—“হাঁ বাছা আছে আমাদের গ্রামের মহাজনের কন্যাকে সম্প্রতি একটি দুৰ্দ্ধান্ত ভূতে পাইয়াছিল। মহাজনের টাকার আর অবধি নাই। সে যে কত ডাক্তার, কত বৈদ্য, কত হেকিম, কত রোজা আনিয়াছিল, তাহার আর কি বলিব, দু’পা দিয়া জড় করিয়াছিল। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় নাই, কেহই সে ভূত ছাড়াইতে পারে নাই। অবশেষে এই গ্রামের একজন দরিদ্র ব্ৰাহ্মণ একটি মন্ত্র পড়িয়াই তাহাকে আরোগ্য করেন। ব্ৰাহ্মণ পূৰ্ব্বে খাইতে পাইত না, ব্ৰাহ্মণ-ব্ৰাহ্মণীর উদরে অন্ন ছিল না, অঙ্গে বস্ত্র ছিল না, এখন অন্ন-বস্ত্রের কথা দূরে থাকুক, দ্বারে হাতী, ঘোড়া, উট বঁধা।” (fiqfeiff asari&sje እ6አbr uskla »ižo 333) a www.amarboi.comio