পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পড়িয়াছেন। ভূত-ডাইনীর কথা তাহারা বিশ্বাস করেন না। ভূতের কথা পড়িলে, তাহারা উপহাস করেন,— “পৃথিবীতে ভূত নাই। আর যদিও থাকে, তো আমাদের তাহারা কি করিতে পারে?” তাঁহাদের দেখাদেখি আজকালের ছেলেমেয়েদের প্রাণেও কিছু কিছু সাহসের সঞ্চার হইয়াছে।

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

তনু রায়

শ্রীযুক্ত রামতনু রায় মহাশয়ের বাস কুসুমঘাটী। “রামতনু রায়” বলিয়া কেহ তাঁহাকে ডাকে না, সকলে তাঁহাকে “তনু রায়” বলে। ইনি ব্রাহ্মণ, বয়স হইয়াছে, ব্রাহ্মণের যাহা কিছু কর্ত্তব্য, তাহা ইনি যথাবিধি করিয়া থাকেন। ত্রিসন্ধ্যা করেন, পিতা-পিতামহ-আদির শ্রাদ্ধতর্পণাদি করেন, দেব-গুরুকে ভক্তি করেন, দলাদলি লইয়া আন্দোলন করেন। এখনকার লোকে ভাল করিয়া ধর্ম্ম-কর্ম্ম করে না বলিয়া রায় মহাশয়ের মনে বড় রাগ।

 তিনি বলেন,— “আজকালের ছেলেরা সব নাস্তিক হাতে জল খাইতে নাই।”

 তিনি নিজে সব মানেন, সব করেন। বিশেষতঃ কুলীন ও বংশজের যে রীতিগুলি, সেইগুলির প্রতি তাহার প্রগাঢ় ভক্তি।

 তিনি নিজে বংশজ ব্রাহ্মণ। তাই তিনি বলেন,— “বিধাতা আমাকে বংশজ করিয়াছেন, তখন বংশজের ধর্ম্মটি আমাকে রক্ষা করিতে হইবে। যদি না করি, তাহা হইলে বিধাতার অপমান করা হইবে, আমার পাপ হইবে, আমাকে নরকে যাইতে হইবে। যদি বল বংশজের ধর্ম্মটি কি? বংশজের ধর্ম্ম এই যে,— “কন্যাদান করিয়া পাত্রের নিকট হইতে কিঞ্চিৎ ধন গ্রহণ করিবে।” বংশজ হইয়া যিনি এ কার্য্য না করেন, তাহার ধর্ম্মলোপ হয়, তিনি একবারেই পতিত হন; শাস্ত্রে এইরূপ লেখা আছে।”

 শাস্ত্র অনুসারে সকল কাজ করেন দেখিয়া তনু রায়ের প্রতি লোকের বড় ভক্তি। স্ত্রীলোকেরা ব্রত উপলক্ষে ইঁহাকেই প্রথম ব্রাহ্মণ বলিয়া থাকেন। সকলে বলেন যে, “রায় মহাশয়ের মত নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ পৃথিবীতে অতি বিরল।” বিশেষতঃ শূদ্রমহলে ইঁহার খুব প্রতিপত্তি।

 তনু রায় অতি উচ্চদরের বংশজ। কেহ কেহ পরিহাস করিয়া বলেন যে,— “ইঁহাদের কোনও পুরুষে বিবাহ হয় না। পিতা-পিতামহের বিবাহ হইয়াছিল কি না, তাও সন্দেহ।”

 ফলকথা, ইহার নিজের বিবাহের সময় কিছু গোলযোগ হইয়াছিল। “পাঁচশত টাকা পণ দিব” বলিয়া একটি কন্যা স্থির করিলেন। পৈতৃক ভূমি বিক্রয় করিয়া সেই টাকা সংগ্রহ করিলেন। বিবাহের দিন উপস্থিত হইলে, সেই টাকাগুলি লইয়া বিবাহ করিতে যাইলেন। কন্যার পিতা, টাকাগুলি গণিয়া ও বাজাইয়া লইলেন। বিবাহের লগ্ন উপস্থিত হইল, কিন্তু তবুও তিনি কন্যাসম্প্রদান করিতে তৎপর হইলেন না। কেন বিলম্ব করিতেছেন, কেহ বুঝিতে পারে না।

 অবশেষে তিনি নিজেই খুলিয়া বলিলেন, — “পাত্রের এত অধিক বয়স হইয়াছে, তাহা আমি বিবেচনা করিতে পারি নাই। সেই জন্য পাঁচশত টাকায় সম্মত হইয়াছিলাম। এক্ষণে আর

কঙ্কাবতী