পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/২৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবম পরিচ্ছেদ কিিষ্টা! কিিষ্টা কুঁথায় রে! কুসীর যে আর একবার বিবাহ হইয়াছে, কাশীতে তাহার পতিকে যে আমি দেখিয়াছি, এই সব কথা প্ৰকাশ করিবার নিমিত্ত সেদিনও আমার বারবার ইচ্ছা হইল। কিন্তু রসময়বাবু সে সব কথা অবগত আছেন কি না আছেন, তাহা আজি জানিতে পারি নাই। সকল কথা প্ৰকাশ করিলে কুসীর পক্ষে ভাল হইবে কি মন্দ হইবে, তাহাও আমি স্থির করিতে পারিলাম না। তাহার পর, ইহাদের সহিত আমার কোন সুবাদ সম্পর্ক নাই। বৃথা পরের ব্যাপারে হস্তক্ষেপের প্রয়োজন কি? এইরূপ ভাবিয়া-চিন্তিয়া আমি চুপ করিয়া রহিলাম। কিন্তু এই কয়দিন ধরিয়া, যাহাতে এ বিবাহ না হয়, সে নিমিত্ত নিয়তই ভগবানের নিকট প্রার্থনা করিতেছিলাম। কোনরূপ দৈবঘটনাসূত্রে এ বিবাহ নিবারিত হইবে, কয়দিন ধরিয়া সেই আশা আমার মনে বলবতী ছিল। কিন্তু বিবাহলগ্ন যতই নিকটবৰ্ত্তী হইতে লাগিল, ততই সে আশা আমার মন হইতে তিরোহিত হইতে লাগিল। তবুও সন্ধ্যা পৰ্যন্ত, একটু কোনরূপ শব্দ হয়, কি কেহ উচ্চৈঃস্বরে কথা কয়, কি কেহ কোন স্থান হইতে দৌড়িয়া আসে, আর আমার হৃৎপিণ্ড “দূড়দৃড়” করিয়া উঠে, আর আমি মনে ভাবি, এইবার বুঝি এই কাল-বিবাহ-নিবারণের ঘটনা ঘটিল । আর একটি কথা। “বাবু’র সহিত হয়তো কুসীর বিরূহ হয় নাই। এই সব ব্যাপারের ভিতর হয়তো কোন মন্দ কথা আছে। সে সন্দেহও মনে বারবার উদয় হইতে লাগিল । কিন্তু যখন আবার কুসীর সেই মধুমাখা মুখপত্নীর "বাবু”র সেই সরল ভােব চিন্তা করিয়া দেখি, তখন সে সন্দেহ আমার মন হইত্ত্বে ত হয়। ফল কথা, আমি কিছুই বুঝিতে পারিলাম না । কোনরূপ দৈব ঘটনা ঘটিয়া এ ধীল-বিবাহ বন্ধ হইয়া যাইবে, অনুক্ষণ আমি সেই আশা করিতেছিলাম; কিন্তু আমার সকল আশা বৃথা হইল। সন্ধ্যা উপস্থিত হইল, বিবাহ নিবারণের নিমিত্ত কোনরূপ ঘটনা ঘটিল না। বিবাহের লগ্ন উপস্থিত হইল। যথাসময়ে সভায় বরকে আনিবার নিমিত্ত রসময়বাবু আমাকে প্রেরণ করিলেন। বরযাত্রীদিগের বাসায় গমন করিয়া বর ও বরযাত্রীদিগকে আমি গাত্ৰোথান করিতে বলিলাম। আর সকলে উঠিয়া দাড়াইলেন, বির উঠিলেন না। তিনি চীৎকার করিয়া বলিলেন,- “কিষ্টা! ও কিষ্ট!” আমি হতভম্ব হইয়া দাঁড়াইয়া রহিলাম। ইহার অর্থ কিছুই বুঝিতে পারিলাম না। মনে মনে কহিলাম যে, “এ হতভাগা ফোকলার সব বিটকেল!” বর পুনরায় চীৎকার করিয়া উঠিলেন, — “কিষ্ট ! কিষ্টা কুথিায় রে!” যে বাটীতে বরযাত্রীদিগের বাসা হইয়াছিল, সেই স্থানে ফুলের বাগান ছিল। বৈশাখ মাস। সেই বাগানে অনেক যুঁই, চামেলি, বেলা প্রভৃতি ফুল ফুটিয়াছিল। সেই ফুল-বাগান হইতে একজন চীৎকার করিয়া উঠিল,-“ঐঃ! এই পদাই আৰ্জেজ্ঞ।” তখন আমি বুঝিতে পারিলাম যে, দিগম্বরবাবুর সঙ্গে যে বাঙ্গালী চাকর ছিল, তাহার নাম কিিষ্টা বা কৃষ্ণ । তাহাকেই তিনি ডাকিতেছিলেন। কিষ্টার বাড়ী বােধ হয় পশ্চিমবঙ্গে। দিগম্বরবাবু পুনরায় চীৎকার করিয়া বলিলেন,- “ঐঃ! শীগগির আয়! লগ্ন ভস্ম হয় যে রে!” ফেঙ্কলী দিগম্বর দুনিয়ার পাঠক এক হও! ... www.amarboi.com ~ SAVO