পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 গোবর্দ্ধন চুপি চুপি বলিলেন, — “বল না? মহাভারতে আছে!"

 তনু রায় তাহা শুনিতে পাইলেন না। ভাবিয়া-চিন্তিয়া বলিলেন—“দাতাকর্ণে আছে।”

 এই কথা শুনিয়া নিরঞ্জন একটু হাসিলেন। নিরঞ্জনের হাসি দেখিয়া তনু রায়ের রাগ হইল।

 নিরঞ্জন বলিলেন,— “রায় মহাশয়! কন্যার বিবাহ দিয়া টাকা গ্রহণ করা মহাপাপ। পাপ করিতে ইচ্ছা হয়, করুন; কিন্তু শাস্ত্রের দোষ দিবেন না, শাস্ত্রকে কলঙ্কিত করিবেন না। শাস্ত্র আপনি জানেন না, শাস্ত্র আপনি পড়েন নাই।”

 তনু রায় আর রাগ সংবরণ করিতে পারিলেন না। নিরঞ্জনের প্রতি নানা কটু কথা প্রয়োগ করিয়া অবশেষে বলিলেন,— “আমি–শাস্ত্র পড়ি নাই? ভাল। কিসের জন্য আমি পরের শাস্ত্র পড়িব? যদি মনে করি, তো আমি নিজে কত শাস্ত্র করিতে পারি। যে নিজে শাস্ত্র করিতে পারে, সে পরের শাস্ত্র কেন পড়িবে?

 নিরঞ্জনকে এইবার পরাস্ত মানিতে হইল। তাঁহাকে স্বীকার করিতে হইল যে, যে লোক নিজে শাস্ত্র প্রণয়ন করিতে পারে, পরের শাস্ত্র তাহার পড়িবার আবশ্যক নাই।


ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

বিদায়

যেদিন রামহরির সহিত কথাবার্তা হইল, সেদিন রাত্রিতে মা, খেতুর গায়ে স্নেহের সহিত হাত রাখিয়া বলিলেন, —"খেতু! বাবা! তোমাকে একটি কথা বলি।”

 খেতু জিজ্ঞাসা করিলেন,— “কি মা?”

 মা উত্তর করিলেন,— “বাছা। তোমার রামহরি দাদার সহিত তোমাকে কলিকাতায় যাইতে হইবে।”

 খেতু জিজ্ঞাসা করিলেন,— “সে কোথায় মা?”

 মা বলিলেন,— “তোমার মনে পড়ে না? সেই যে, যেখানে গাড়ী-ঘোড়া আছে?”

 খেতু বলিলেন,— “সেইখানে? তুমি সঙ্গে যাবে তো মা?”

 মা উত্তর করিলেন,— “না বাছা! আমি যাইব না, আমি এইখানেই থাকিব।”

 খেতু বলিলেন,— “তবে মা! আমিও যাইব না!"

 মা বলিলেন,— “না গেলে বাছা চলিবে না। আমি মেয়েমানুষ, আমাকে যাইতে নাই। রামহরি দাদার সঙ্গে যাইবে, তাতে আর ভয় কি?”

 খেতু বলিলেন,— “ভয়! ভয় মা! আমি কিছুতে করি না। তবে তোমার জন্য আমার মন কেমন করিবে, তাই মা বলিতেছি যে, যাব না।”

 মা বলিলেন,— খেতু! সাধ করিয়া কি তোমাকে আমি কোথাও পাঠাই? কি করি, বাছা? না পাঠাইলে নয়, তাই পাঠাইতে চাই।”

কঙ্কাবতী
১৩