পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/২৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পীড়িতার মাথা পুনরায় বালিশের নিম্নে গিয়া পড়িল। আঁচল দিয়া চক্ষু মুছিয়া, তাড়াতাড়ি তিনি মাথাটি তুলিয়া বালিশের উপর রাখিলেন। প্রতিবাসিনী পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলেন,- “রসময়ের কোন খবর নাই?” ভগিনী উত্তর করিলেন,- “পরশু তাহাকে পত্ৰ দিয়াছি। চিঠিখানি রেজেক্টারি করিয়াছি; কাল সে পাইয়া থাকিবো। আজ তাহার আসা উচিত ছিল, কিন্তু এ দুৰ্যোগে সে কি করিয়া আসিবে, তাই ভাবিতেছি।” প্ৰতিবাসিনী জিজ্ঞাসা করিলেন,- “খুকী কেমন আছে?” ভগিনী উত্তর করিলেন,- “সে আছে ভাল! পোড়ারমুখী মাকে খাইতে আসিয়াছিল। দেখ গা! পৃথিবীতে আর আমাদের কেহ নাই; মা নাই, বাপ নাই, ভাই নাই, কেহ নাই! সংসারে আমার কেবল এই ক্ষান্ত ছিল। দিদি বলিতে ক্ষান্ত অজ্ঞান হইত। আমার ছেলে-পিলে হয় নাই। মনে করিয়াছিলাম, ক্ষান্তর পাঁচটা হইবে, তাদের মুখ দেখিয়া আমি সুখী হইব।। কৰ্ত্তাও ক্ষান্তকে বড় ভালবাসেন। রায় মহাশয়ের পত্র যাই তিনি পাইলেন, আর তৎক্ষণাৎ আমাকে পঠাইয়া দিলেন। ক্ষান্তর ছেলে হইবে, মনে মনে কত আশা করিয়া আমি আসিলাম। ক্ষান্ত যে আমাকে ফেলিয়া চলিয়া যাইবে, একথা এখনও মনে ভাবি নাই।” এই কথা বলিয়া তিনি পুনরায় কঁদিতে লাগিলেন। প্রতিবাসিনী প্ৰবোধ দিয়া বলিলেন,- “ভয় নাই, ভাল হইবে । মানুষের রোগ কি হয় না? যদুর স্ত্রীর আঁতুড়ে এইরূপ হইয়াছিল। ভাল হইয়া আবার কত ছেলে-পিলে তাহার হইয়াছে। দাই গেল?” ভগিনী উত্তর করিলেন,- “দুই প্ৰহরের সময় র নিমিত্ত সে বাটী। গিয়াছে। সেই পৰ্যন্ত এখনও আসে নাই; বােধ হয়। শীঘ্রই আঙ্গু প্ৰতিবাসিনী বলিলেন,- “ঔষধ-পালা ਕ?" ভগিনী উত্তর করিলেন, — “ঐ গ্রামে হইবে? দাই কি ঔষধ দিয়াছিল।” ৰ প্রতিবাসিনী বলিলেন,- “দাই , তেল গরম করিয়া সৰ্ব্বশরীরে মাখাইয়া উত্তমরূপে তাপ দিতে বলিবো।” এই বলিয়া প্ৰতিবাসিনী চলিয়া গেলেন । বলা বাহুল্য যে, এই পীড়িত স্ত্রীলোকটি আর কেহ নহেন, ইনি রসময়বাবুর প্রথম পক্ষের স্ত্রী। রসময়বাবু তখন কলিকাতায় কৰ্ম্ম করিতেন। তিনি তখন অতি অল্প বেতন পাইতেন। দাস-দাসী রাখিবার তখন তাহার ক্ষমতা ছিল না। তাহার অন্য অভিভাবকও কেহ ছিলেন না । অগত্যা স্ত্রীকে একেলা ছাড়িয়া কলিকাতায় তাঁহাকে থাকিতে হইত। কিন্তু তাহার জন্য বিশেষ ভাবনার কোন কারণ ছিল না; প্রতিবাসী ও প্রতিবাসিনীগণ সকলেই তাঁহার স্ত্রীর তত্ত্বাবধান করিতেন। এই বিপদের সময়ও তাঁহারা দিনের মধ্যে ভিজিতে ভিজিতে অনেকবার আসিয়া তত্ত্ব লাইতেছিলেন। আবশ্যক হইলে তাহারা আনিয়া দিতেন। কিন্তু চারি ক্রোশ দূরে একখানি গণ্ডগ্ৰাম হইতে ডাক্তার আনিতে হইত। একবার ডাক্তার আনিতে দশ টাকা খরচ হয়। সে টাকা ৱসময়বাবুর স্ত্রীর ভগিনীর হাতে ছিল না। প্রসবকালে ভগিনীর সেবা করিবার নিমিত্ত সম্প্রতি তিনি সেই গ্রামে আসিয়াছিলেন। তাহার স্বামী অল্প বেতনে সামান্য একটি চাকরী করিয়া দিনপাত করিতেন। সেজন্য টাকা-কড়ি লইয়া তিনি ভগিনীর গৃহে আগমন করেন নাই। বাঁধা দিয়া টাকা কজর্জ করিবেন, এরূপ গহনাও তাঁহার নিকট ছিল না। রসময়বাবুর নিকট তিনি পত্ৰ প্রেরণ করিয়াছিলেন। ভগিনীপতি শীঘ্রই আসিয়া উপস্থিত হইবে। সে আসিয়া ডাক্তার আনিবে, নাই, কবিরাজ নাই, ঔষধ-পালা কি করিয়া SR8 R দুনিয়ার পাঠক এক হও! ~ www.amarboi.comাির্ড”********