পাতা:ত্রৈলোক্যনাথ রচনাসংগ্রহ.djvu/২৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হীরালালের হৃদয়-তন্ত্রী সেই মুহূৰ্ত্তে বাজিয়া উঠিল। কেন কুসী হঠাৎ আপনার পা সরাইয়া লইল, হীরালাল তাহা বুঝিতে পারিল। কুসী ঈষৎ রাগ করিল, তাহাতেই হীরালাল পৃথিবী অন্ধকার দেখিল। হীরালাল বুঝিল যে, নিয়তি তাহাকে এই স্থানে টানিয়া আনিয়াছো-কুসী বিনা সংসার বৃথা! জীবন বৃথা! কুলমৰ্যাদা? ধনসম্পত্তি? কুসীর তুলনায় সে সমুদয় কি ছার বস্তৃ! আবশ্যক হইলে কুসীর নিমিত্ত সে প্রাণ পৰ্যন্ত বিসৰ্জন করিতে পারে। কুসী অভাবে প্ৰাণে প্রয়োজন কি? তোমরা হীরালালকে দোষ দিও না। এ নূতন কথা নহে, চিরকাল এরূপ ঘটনা ঘটিয়াছে; এখনও ঘটিতেছে। অসংখ্য নর-নারী এই সংসারক্ষেত্রে নিয়তই বিচরণ করিতেছে। স্ত্রী-পুরুষ সম্বন্ধে কিছুদিন ইহলোকে আবদ্ধ থাকিয়া, কালগ্ৰাসে পতিত হইতেছে। তাহাতে বিশেষত্ব কিছুই নাই। কিন্তু প্ৰকৃত যে যাহার পুরুষ, প্রকৃত যে যাহার প্রকৃতি, যখন এইরূপ দুই জনে সহসা চার-চক্ষু হইয়া যায়, তখনই পুরুষ-প্রকৃতির অর্থ মানুষের উপলব্ধ হয়। সেই দুই জনে বুঝিতে পারে যে, তাহারা দুই নহে, তাহারা এক;— এক মন, এক প্ৰাণ, কেবল দেহ ভিন্ন। তাহারা বুঝিতে পারে যে, এক নিয়তিসূত্রে বিধাতা দুই জনকে একত্র বন্ধন করিয়াছেন। সে বন্ধন কে বিচ্ছিন্ন করিতে পারে? হীরালাল তাহা বুঝিতে পারিল; কুসী। তাহা বুঝিতে পারিল না, কিন্তু অনুভব করিল। অবলম্বিত তরুকে সহসা কড়িয়া লইলে লতার যে গতি হয়, কুসীর প্ৰাণের আজ সেই অবস্থা হইল। জগতে আর যেন তাহার কেহই নাই। — সেইরূপ নিঃসহায় ভাব দ্বারা কুসীর মন আচ্ছন্ন হইল; লতার ন্যায় ভূতলে পড়িয়া, কুসীর প্রাণ যেন ধূলায় ধূসরিত হইতে লাগিল। যাহাতে কান্না না আসিয়া যায়, মস্তক অৱনত করিয়া কুসী। সেই চেষ্টা করিতে লাগিল । ള് হীরালাল বলিল,—“আমি কলিকাতা যাইব সুনিয়া, তুমি আমার উপর রাগ করিলে?” কোন উত্তর নাই । ஜி হীরালাল পুনরায় বলিল,-“কুসী! বুলক্ষীকি হইয়াছে? চুপ করিয়া রহিলে কেন?” ဇ္ရိအံ့နှီဇို হীরালাল পুনরায় বলিল,-“আমি”কলিকাতা যাই, তাহা তোমার ইচ্ছা নহে?” কোন উত্তর নাই । হীরালাল পুনরায় বলিল,—“কেবল “হাঁ’ কি না”। এই দুইটি কথার একটি কথা বল। আমি কলিকাতায় যাইব কি না যাইব? হাঁ কি না?” কোন উত্তর নাই । হীরালাল পুনরায় বলিল,-“আমি সত্য বলিতেছি, তুমি যাহ বলিবে, তাহাই আমি করিব। তুমি যদি কলিকাতায় যাইতে বল, তাহা হইলে আমি যাইব, তুমি যদি যাইতে মানা কর, তাহা হইলে আমি যাইব না। আচ্ছা! কথা কহিয়া বলিতে হইবে না; তুমি ঘাড় নাড়িয়া বল,— আমি কি করিব? আমি যাইব কি যাইব না?” যতদূর সাধ্য, ততদূর মস্তক অবনত করিয়া কুসী এইবার ঈষৎ ঘাড় নাড়িল। হীরালাল বলিল,-“তবে আমি যাইব না?” আরও একটু স্পষ্টভাবে কুসী ঘাড় নাড়িল। কিন্তু হীরালাল যেন বুঝিয়াও বুঝিল না। হীরালাল বলিল,-“তোমার ঘাড় নাড়া আমি ভালরূপ বুঝিতে পারিতেছি না। এইবার তুমি কথা কহিয়া বল।” কুসী অতি মৃদুস্বরে বলিল,-“না।” SCO ifting -iba gas sel - www.amarboicomf:"""